ফ্লোরিডার ওয়েস্ট প্লাম বিচের গলফ ক্লাবের বাইরের দৃশ্য এটি। অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টরনীতির প্রতিবাদে শনিবার ক্লাবের বাইরে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। এসময় নিজস্ব এই গলফ ক্লাবে অবসর যাপন করছিলেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিন, ট্রাম্পের গাড়িবহর দেখার সাথে সাথে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের হাতে ছিল মেক্সিকো-গুয়াতেমালার পতাকা এবং ট্রাম্প বিরোধী শব্দ লেখা প্লাকার্ড।
শুধু অভিবাসীরা নয় এবার, বাইডেন প্রশাসনের কূটনীতিক ও ফেডারেল কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র আটকে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ তালিকায় আছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেন এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মোনাকো।
এছাড়া, ইউএসএইড বন্ধের সিদ্ধান্তের রেশ কাটতে না কাটতেই বিতর্কিত ভূমি আইন ও অন্যায্য জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগ তুলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্ধ করেছেন মার্কিন অর্থ সহায়তাও।
এদিকে, কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হওয়ার জেরে আবারও আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক। গেল ৭ ফেব্রুয়ারি টরেন্টোয় আয়োজিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকনেতাদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ট্রুডো দাবি করেন, কানাডাকে অঙ্গরাজ্য বানানো নিয়ে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছে, তা মোটেও কথার কথা ছিল না।
ট্রুডোর বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই, শনিবার এ নিয়ে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে কথা বলেছেন কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী। কানাডার পণ্যে শুল্ক বাড়ালেও মার্কিন নাগরিকরাও বিপদে পড়বেন এমন প্রেক্ষাপট উল্লেখ করলেও ক্যানাডিয়ান মন্ত্রী নিশ্চিত করেন, ইউরোপের দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের কথা ভাবছে অটোয়া।
কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি এনজি বলেন, 'ইউ-কানাডা কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট- এনইটিএ বাস্তবায়নের পথে। পাশাপাশি আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিও। কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নজরে এসেছে। দুই পক্ষের বিচারে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।'
তবে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা চাঙ্গা করতে কানাডিয়ান, মেক্সিকান বা চীনা পণ্যে শুল্কারোপ ট্রাম্পের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হুমকিতে ফেলতে যাচ্ছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক রাধিকা দেসাই বলেন, 'বাণিজ্যনীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের কী লাভ হবে তা স্পষ্ট নয়। ডলার ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না করে, শুল্কনীতিকে ব্যবহার করে উনি কাকে ধোঁকা দিচ্ছেন? বিনয়ের সাথে বলতে চাই, এতে করে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতিতে মর্যাদা ও আধিপত্য হারাবে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা শপথ গ্রহণের এক মাস পাড় হওয়ার আগেই যেভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যনীতিতে রদবদল আনছেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তাতে করে রাতারাতি ভোল পাল্টে যেতে পারে বিশ্ব রাজনীতির। দেখা যেতে পারে ক্ষমতার নতুন মেরুকরণও।