সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়নের পথে হোঁচট খেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছয় মাসের বেতনের বিনিময়ে ২০ লাখ সরকারি কর্মীকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো হোয়াইট হাউজ। আশা ছিল দুই লাখ কর্মী প্রস্তাবটি গ্রহণ করবেন। সাড়া দিয়ে আবেদনও করেছিলেন ৬০ হাজার কর্মী। কিন্তু বিধিবাম। মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট বিচারক জর্জ ওটোল আদেশ দেন, আগামী সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) শুনানির আগ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে নীতি বাস্তবায়ন। সরকারি কর্মীদের সংগঠনের এক সদস্য ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে মামলা দায়েরের পর এ সিদ্ধান্ত নেন আদালত। যদিও হোয়াইট হাউজ একে শাপে বরের সঙ্গে তুলনা করছে। প্রেস সেক্রেটারি জানান, সময়সীমা বৃদ্ধির কারণে বাড়বে স্বেচ্ছায় অবসরের সংখ্যা।
এছাড়াও মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি'র কর্মী সংখ্যা ১০ হাজার থেকে কমিয়ে ২৯৪ জনে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজের একটি সূত্র। আইনের ফাঁকফোকরের মাধ্যমে সংস্থাটিকে পঙ্গু করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ট্রাম্প, এমনটাই শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের অধ্যাপক ডোনাল্ড মোয়নিহান বলেন, 'সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন নির্দেশনা প্রণয়ন করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। তিনি কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে রাজনৈতিক উপদেষ্টা রাখতে পারেন। তবে, এটি আর চাকুরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে, যা আইনত প্রেসিডেন্ট করতে পারেন না।'
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ইউএস এআইডিকে কার্যত অচল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাদ্য বিতরণের অনুমোদন দিচ্ছে না। খাদ্য সংকট নিয়ে তৈরি করা বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ৫৯টি দেশের ২৮ কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। সংস্থাটির মাধ্যমে সহায়তা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়ে আছে পাঁচ লাখ টন খাদ্য। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট প্রকট হওয়ার শঙ্কা থাকলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, পর্যালোচনার মাধ্যমে কয়েকটি মিশন খোলা রাখার প্রস্তাব দেয়া হবে প্রেসিডেন্টের কাছে। তবে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন অসংখ্য মার্কিন নাগরিক।
স্থানীয় একজন বলেন, 'সাধারণ মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। আমরা তাদের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিতের জন্য আটক হতেও রাজি আছি।'
অন্য একজন স্থানীয় বলেন, 'এই কর্মসূচিটি পুরো বিশ্বে চলার কথা ছিল। অথচ তারা হঠাৎই এটি বন্ধ করে দিলো। এটি বড় সংকট তৈরি করছে।'
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট কিংবা ইলন মাস্ক, কারোরই ইউএসএআইডি বন্ধের অধিকার নেই। এটি সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই অধিকার শুধু কংগ্রেসের কাছে রয়েছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, 'যে অঞ্চলগুলোয় বিশেষ পরিস্থিতি রয়েছে, আমরা সেগুলোকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি। আমরা সবার কথা শুনতে জাই। মানুষের জীবনে বাধা তৈরি করতে চাই না। আমরা এখানে শাস্তিদাতার ভূমিকায় নেই।'
বিদেশি সহায়তার দিক থেকে বিশ্বজুড়ে শীর্ষস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। গেল ৫ বছরে দেশটির মানবিক সহায়তা প্রদানের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলার। একই সময়ে জাতিসংঘের সহায়তা ছিল ৩৮ শতাংশের কম।