উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পকে তুলোধুনো করলেন কামালা ও টিম ওয়ালজ

প্রথম নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিয়েই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তুলোধুনো করলেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস ও রানিং মেট টিম ওয়ালজ।

কৌতুক আর বিদ্রূপে হল মাতানো ওয়ালজ যেন প্রমাণ করলেন, রানিং মেট হিসেবে তাকে বেছে নিয়ে ভুল করেননি কামালা। হাস্যরসের মধ্য দিয়েই ট্রাম্পের আমলে অপরাধ বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভোটারদের বার্তা দেন ওয়ালজ।

প্রেসিডেন্সিয়াল রানিং মেট হিসেবে মঙ্গলবার রাতে যখন মঞ্চ ত্যাগ করেন মার্কিন রাজনীতির নতুন এ জুটি, হলভর্তি শ্রোতাদের মুখে ছিল একটাই শব্দ। 'ওয়াও'। এদিন হোয়াইট হাউজের দৌড়ে প্রথমবার এক মঞ্চে ওঠেন কামালা হ্যারিস ও টিম ওয়ালজ।

ফিলাডেলফিয়ার নির্বাচনী সমাবেশে শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়াই বলে দেয়, রানিং মেট হিসেবে ওয়ালজকে বেছে নিয়ে ভুল করেননি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কামালা।

আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যদি সত্যিই জয়ী হন কামালা, সেক্ষেত্রে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন ওয়ালজ।

ডেমোক্র্যাট শিবিরে সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তালিকায় বেশ কয়েকজনের নাম থাকলেও বাজিমাত করেন ওয়ালস। বলা হচ্ছে, মার্কিন রাজনীতিতে যখন একটা পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, জাতীয় অর্থনীতি থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণা- সবকিছুতেই যখন ইতিবাচক পরিবর্তনের আশায় বুঁদ হয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রবাসী, ঠিক তখনই রানিং মেট হিসেবে এই ইতিবাচকতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন কামালা হ্যারিস।

আর এর সুফল প্রথম দিনের প্রচারণাতেই স্পষ্ট। কৌতুক আর বিদ্রূপে হলভর্তি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেন সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক শিক্ষক ৬০ বছর বয়সী টিম ওয়ালজ।

নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নেয়া এক শ্রোতা বলেন, ‘সবার যে উচ্ছ্বাস, তা ভীষণ উপভোগ করেছি আমি। দলবেঁধে আসা, আনন্দ করা, কী ছিল না আজ!’

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সবচেয়ে টালমাটাল সময়ে হ্যারিসের সঙ্গে যুক্ত হলেন প্রবীণ রাজনীতিক ওয়ালজ।

২০০৬ সালে রিপাবলিকান দুর্গে ফাটল ধরিয়ে মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৮ সালে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত ১২ বছর ছিলেন প্রতিনিধি পরিষদেই।

দীর্ঘ এই যাত্রার পরিক্রমায় তাই এবার হাস্যরসের মধ্য দিয়েই ট্রাম্পের আমলে অপরাধ বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভোটারদের আগাম সতর্কবার্তা দিলেন কামালার রানিং মেট ওয়ালজ।

ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম ওয়ালজ বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিকে তিনি (ট্রাম্প) পাতালে ঠেলে দিয়েছেন। এবং নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে সহিংস অপরাধ বেড়ে গিয়েছিল। কত অপরাধ তিনি করেছেন, তা গুণে শেষ করা সম্ভব নয়।’

জ্যামাইকা ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কামালা নির্বাচনী দৌড়ে ওয়ালজকে সঙ্গী করে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একদিকে মিডওয়েস্টার্ন রাজনীতিবিদ ওয়ালজ নিজ অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট ভোটব্যাংক তো বাড়াবেনই, অপরদিকে উইসকনসিন আর মিশিগানেরও ভোটারদের সঙ্গেও সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তার দল।

ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেন, ‘প্রার্থিতা ঘোষণার দিন থেকে এমন সঙ্গী খুঁজছিলাম আমি, যিনি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমার সহযোগী হবেন। একজন নেতা, যিনি আমাদের দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং সামনে দিয়ে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবেন। যিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির হয়ে লড়বেন।’

গভর্নর হিসেবে নিজ অঙ্গরাজ্যে স্কুলে বিনামূল্যে নাশতার প্রচলন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কর কমানো, কর্মজীবীদের বেতনভুক্ত ছুটি বাড়ানোসহ নানা কাজ করেছেন ওয়েলজ।

নারীদের সন্তান জন্মদানে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারের প্রতি সোচ্চার তিনি, গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের স্বার্থরক্ষা আর আগ্নেয়াস্ত্র অধিকারেও সমর্থন আছে তার। গ্রাম থেকে উঠে আসা প্রগতিশীল আইনপ্রণেতা ও সরলভাষী এ বক্তা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চল ও শ্বেতাঙ্গ ভোট বাড়াতে সাহায্য করবেন বলে প্রত্যাশা ডেমোক্রেটিক শিবিরের।

ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যাপক জেনিফার ললেস বলেন, ‘দুই ধরনের ভোটার গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত যারা নিজ নিজ পছন্দের দলের কট্টর সমর্থক, যাদের ভোট বদলাবে না। ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান- দুই শিবিরকে মূল ভোটযুদ্ধে রাজ্যগুলোতে নিজ নিজ ভোটারদের ধরে রাখতেই হবে। যেহেতু দুই দলেই এ ধরনের ভোট প্রায় সমান, তাই স্বাধীন ও সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন- এমন দোদুল্যমান ভোটারদের দলে টানার লড়াই করতে হবে প্রার্থীদের।’

এবারের ভোটযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দুই ময়দান বলে মনে করা হচ্ছে উইসকনসিন আর মিশিগানকে। হোয়াইট হাউজের দৌড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্বেতাঙ্গদের ভোট বেশি পড়েছে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের ঝুলিতে, যিনি কামালা হ্যারিসের প্রতিদ্বন্দ্বী।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখানো কামালার রানিং মেট শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন বাড়াতে সক্ষম বলে মনে করছেন অনেকে।

tech