দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। শুরুটা হয়েছিলো নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। শিক্ষার্থীদের দাবি, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলকে অস্ত্র সহায়তা না দেয়া এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনা।
তবে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের ওপর দমন পীড়ন চালাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন খালি করতে ব্যবহার করা হয় পুলিশকে। এমনকি প্রতিবাদ মার্কিন নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার বলা হলেও চলে শিক্ষার্থীদের আটক অভিযান।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল খালি করার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে জড়ো হন পুলিশ সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয় ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড। আটক করা হয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে। মুসলিম শিক্ষার্থীর হিজাব জোরপূর্বক খুলে ফেলার পাশাপাশি নামানো হয় ফিলিস্তিনের পতাকা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ইহুদি শিক্ষার্থী। ফিলিস্তিনিদের জীবন নিয়ে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইহুদিরা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে পারবে না, এই ধারণা পরিবর্তন জরুরি।
বল প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সফল হওয়ায় ১৭ মে পর্যন্ত পুলিশকে ক্যাম্পাসে থাকার অনুরোধ করেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় দাগী আসামীরা। তাই বিক্ষোভের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের হস্তক্ষেপে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ।
নিউইয়র্ক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রেবেকা ওয়েনার বলেন, 'আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেককেই আমরা শনাক্ত করেছি, যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাই সাত মাসব্যাপী যুদ্ধের সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।'
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র মার্তা হুরটাডো বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে পুলিশের ভূমিকায় আমরা উদ্বিগ্ন। কোনো বড় বিষয়ে মতবিরোধ থাকলে নাগরিকরা কথা বলতেই পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ।'
শিক্ষার্থী আন্দোলনের সঙ্গে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়িয়ে আছে শতবছর ধরে। ৫৬ বছর আগের এই দিনেই ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে হ্যামিল্টন হলে জড়ো হয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে সেসময় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
কলাম্বিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। স্টানফোর্ডে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন শিক্ষকরা। তবে নিউইয়র্কের মতো টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া ও ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ খালি করে পুলিশ। দুই সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভে আটকের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক হাজার।