মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফের মধ্যপ্রাচ্য সফরে অ্যান্টনি ব্লিংকেন

হামাসের শীর্ষ নেতা হাশেম সাফিউদ্দিনের মৃত্যুর খবর তিন সপ্তাহ পর নিশ্চিত করলো ইসরাইল। গাজা ও লেবাননে একযোগে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একদিনে মারা গেছে অর্ধশত মানুষ। চরম মানবিক সংকটে গাজার উত্তরের বাসিন্দারা। এদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে ফের মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। যদিও হিজবুল্লাহ বলছে তারা ইসরাইলের সঙ্গে আর কোনো সমঝোতায় যেতে চায় না।

গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন চলছে একযোগে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একের পর এক হামলায় হতাহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। জাতিসংঘ বলছে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলো ধ্বংস করে আরও একটি গাজায় পরিণত করেছে ইসরাইলিরা। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতালও। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন বাসিন্দারা।

এদিকে হামলার প্রায় তিন সপ্তাহ পর হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাশেম সাফিউদ্দিনকে হত্যার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বিমান হামলায় সাফিউদ্দিন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে আইডিএফ। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লার ওই শীর্ষ নেতাকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। সংগঠনটির সাবেক প্রধান প্রয়াত হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন তিনি। সাফিউদ্দিনের সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দপ্তরের কমান্ডার আলী হুসেইন হাজিমাও। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি হিজবুল্লাহ।

এর মধ্যেই ইসরাইলের আকাশে ওড়া সন্দেহভাজন দু'টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে আইডিএফ। বন্দর নগরী আইলাতে এই ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরাকের ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ। এছাড়া তেল আবিবের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা।

উত্তর গাজাকে কার্যত বাকি বিশ্ব থেকে আলাদা করে ফেলেছে ইসরাইলিরা। বেত লাহিয়া, জাবালিয়া ও বেইত হানুন এই তিনটি শহরে ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখে আগ্রাসন চালাচ্ছে নেতানিয়াহু বাহিনী। শরণার্থী শিবিরের কয়েক হাজার বাসিন্দা খাদ্য, পানি ও জরুরি চিকিৎসা সংকটে ভুগছে। ফুরিয়ে গেছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুত। ইসরাইলি হামলায় মরদেহও উদ্ধার করতে পারছেনা না স্বেচ্ছাসেবকরা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও বিমান হামলায় আমাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে আমরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।'

গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে ব্লিংকেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে এটি ব্লিংকেনের ১১তম সফর।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, 'আমার বিশ্বাস হামাস নেতা সিনওয়ারের মৃত্যুর মাধ্যমে জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সংঘাত শেষ হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।

আইজ্যাক হার্জগ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'হামাস নেতাদের মৃত্যুর পর ইসরাইলের হাতে অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইসরাইল সব দিক থেকেই চেষ্টা করে যাবে। এই সুযোগটি আমাদের কাজে লাগাতে হবে।'

যদিও হিজবুল্লাহ বলছে, ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতায় গিয়ে সময় নষ্ট করবে না তারা। এছাড়াও নেতানিয়াহুর বাড়িতে হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছেন হিজবুল্লাহর এই নেতা।

হিজবুল্লাহ মিডিয়া উইংয়ের প্রধান হাজ মোহাম্মদ আফিফ বলেন, 'যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের আক্রমণে আমাদের অনেক নেতা ও বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আমরা পিছপা হবো না। ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধের কোনো নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক চুক্তি মানেনি। বন্দীদের জীবন বিপন্ন করার দায় ইসরাইলকেই নিতে হবে।'

গাজায় জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর দাবিতে তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে শত শত মানুষ। এসময়, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের আস্থা আছে জানিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষে স্লোগানও দেন তারা। জিম্মিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য ইসরাইল সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর