২০০৯ সাল থেকে ইসরাইলের ক্ষমতায় আছেন ৭৫ বছর বয়সী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। তার দল লিকুদ পার্টি ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে। কঠোর ইরানবিরোধী নীতি ও ইহুদি জনগোষ্ঠির সুরক্ষার প্রতিজ্ঞা নিয়ে জনগণের মনে জায়গা করে নেন নেতানিয়াহু। সেই থেকে দেশটির নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান তিনি। তবে সেই জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে এখন।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ঘটনা এলোমেলো করে দেয় ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার শিকার হয় ইসরাইলবাসী। প্রশ্ন উঠে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে। হামাসকে প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায়ে তার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে নামেন হাজার হাজার ইসরাইলি।
সম্প্রতি ইসরাইলি দৈনিক মারিভে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া নিরাপত্তা সংস্থার প্রতি আস্থা রাখলেও, নেতানিয়াহুর ওপর ভরসা কমছে ইসরাইলি জনগণের। জনমত জরিপে মাত্র ৩২ শতাংশ জনগণ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুকে উপযুক্ত মনে করেন। লাজার ইনস্টিটিউটের সবশেষ জরিপ বলছে, এখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ডানপন্থী লিকুদ পার্টি ৪ ভাগের এক ভাগ আসন পেতে পারে।

ইসরাইলের সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গ্যান্টজ। ছবি: সংগ্রহীত
অন্যদিকে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গ্যান্টজ। ৫২ শতাংশ ইসরাইলি তাকে সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চান। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন গ্যান্টজ। যুদ্ধ শুরুর পর নেতানিয়াহুর যুদ্ধের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন তিনি। এরপর থেকেই তার প্রতি আস্থা বাড়তে থাকে জনগণের। সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসে, গ্যান্টজের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য পার্টি কমপক্ষে ৪০টি আসন পাবে।
গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রীসভার মধ্যেও দেখা দিয়েছে মতানৈক্য। যুদ্ধের খরচ চালাতে গিয়ে অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে দেশটি। তিন মাস পরও জিম্মিদের মুক্ত করতে না পারায় বিক্ষোভ হচ্ছে তেল আবিবসহ বিশ্বের অনেক দেশে। আন্তর্জাতিকভাবেও চাপে আছেন নেতানিয়াহু।
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। যা দেশটিকে আঞ্চলিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ইরান, মিশর, কাতার ও জর্ডানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। হুতিদের আক্রমণ নিয়ে ইরানকে দুষছে ইসরাইল। বিরোধীরা বলছেন, নেতানিয়াহুর ব্যর্থ কূটনৈতিক নীতি ইসরাইলকে বিপদে ফেলেছে।
গাজা ও মিশর সীমান্তের ফিলাডেলফিয়া করিডোর নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এই করিডোর দিয়ে গাজায় অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ এনে, তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু। জবাবে কড়া হুঁশিয়ারি জানায় মিশর।
জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে কাতারের মধ্যস্থতার কড়া সমালোচনা করেন নেতানিয়াহু। জবাবে তীব্র নিন্দা জানায় কাতার। জর্ডান সরকারের ইসরাইলবিরোধী মন্তব্যের জেরে আটকে গেছে দুই দেশের মধ্যকার পানি চুক্তিটি।