এত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ইউক্রেনের সেনাদের হারিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক দখল করতে যুদ্ধক্ষেত্রে বেগতিক অবস্থায় পড়ে গেছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা।
ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার সেনাদের পাশাপাশি তাদের যুদ্ধ করার কথা থাকলেও উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ফাঁকা মাঠে রেখে গেছে তারা। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, কুরস্কে কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে গেছেন তারা। বন্দি যেন না হয়ে যেতে হয়, সেজন্য তারা নিচ্ছেন আরও বিধ্বংসী পদক্ষেপ।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসন আর খারকিভে ভয়াবহ সংঘাত চলছে। কুরস্কেও সংঘাত বেড়েছে। কিন্তু এখানে উত্তর কোরিয় সেনারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রুশ সেনাবাহিনী আর উত্তর কোরিয়ার সরকারের যেন কোন আগ্রহই নেই যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা সেনাদের নিয়ে। তারা বাঁচবে কীভাবে এই চিন্তাও কারও মাথায় নেই। তাদের ধরা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে গেছে। তারা নিজেরাই নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। রাশিয়া তাদের কোন সুরক্ষা না নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, মস্কো কিংবা পিয়ংইয়ং, কোন কর্তৃপক্ষের উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন চিন্তা নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত কয়েকজন উত্তর কোরীয় সেনা আটক হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করছেন।
জেলেনস্কি বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বাঁচাতে কোন পদক্ষেপ নেই কারো, অথচ রুশ সেনাদের সুরক্ষায় সবসময় তৎপর থাকে মস্কো।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বিষয়ে আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। ইউক্রেনের সেনারা কয়েকজনকে বন্দি করতে পেরেছে। কিন্তু তারা অনেক বেশি আহত অবস্থায় ছিল। তাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব না। এই পাগলামি স্বৈরশাসকের দেশের মানুষই করবে। কোরিয়ার মানুষকে ইউরোপে যুদ্ধ করে প্রাণ কেন দিতে হবে? চীনের উচিত পিয়ংইয়ংকে চাপ দেয়া।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবিও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বুঝে শুনেই মৃত্যুকূপে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এক হাজারের বেশি সেনা হতাহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আর দক্ষিণ কোরিয়া। এদিকে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়া কিংবা রাশিয়া এখনও কুরস্কে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি স্বীকার করেনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন আর দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার ১১ থেকে ১২ হাজার সেনা যুদ্ধ করছে রুশ সেনাদের পাশাপাশি।
এই তথ্যের সত্যতা বরাবরই ঢাকার চেষ্টা করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি জানান, উদ্দেশ্য সফল করে ইউক্রেনে সেনা অভিযান পুরোপুরি শেষ হরতে চান তিনি। সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া আবারও চাইলে নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিক ব্যবহার করতে পারে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘প্রয়োজনে আরও শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবো। কিন্তু তাড়াহুড়ো নেই। আমরা কিছু গোপনও করতে চাই না। অনেক বেশি ওরশেনিক ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের নেই। তবে এই অস্ত্রগুলো খুব শক্তিশালী। আমরা এগুলোর উৎপাদন বাড়াচ্ছি। বেলারুশে কিছু মোতায়েন করবো। কারণ ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়বে।’
এদিকে, পাঁচ মাস ধরে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্কে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের সেনারা। এই অঞ্চলকে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে চাইছে কিয়েভ। রাশিয়া হাজার হাজার সেনা কুরস্কে মোতায়েন করে দেয়ায় অনেক বেশি হতাহত হচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা।
৯শ' ৮৪ স্কয়ার কিলোমিটার এলাকা দখলে নিলেও ৪০ শতাংশই চলে গেছে মস্কোর দখলে। ৩ বছরের সেনা অভিযানে ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে। সম্মুখ সারির এক হাজার কিলোমিটার এলাকায় ইউক্রেনের দুর্বলতা বাড়ছে। পূর্বাঞ্চলে কমছে প্রভাব। এমন অবস্থায় পশ্চিমাদের কাছ থেকে আরও বেশি সামরিক সহায়তা চাইছে জেলেনস্কি প্রশাসন।