ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

জেনারেল ইগর ও তার সহকারী হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজনকে আটকের দাবি মস্কোর

রুশ জেনারেল ইগর কিরিলোভ ও তার সহকারীকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটকের দাবি মস্কোর। ২৯ বছর বয়সী উজবেগিস্তানের এই নাগরিক ইউক্রেনীয় সিক্রেট সার্ভিসের মদদে রুশ জেনারেলকে হত্যা করেছে বলে দাবি করছে রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ। এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে চলমান যুদ্ধে সক্ষমতা জানান দিতে ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হাই-প্রোফাইল জেনারেলকে গুপ্তহত্যার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বলে মনে করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, কিয়েভের রণনীতিতে একধরনের তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

চলমান সংঘাত বন্ধে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যখন অস্ত্রবিরতি কিংবা কিয়েভে শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব করছেন- তখন এসব ছাপিয়ে বারবার আলোচনায় গুপ্তহামলায় রুশ জেনারেলকে হত্যার পেছনে কিয়েভের স্বার্থ।

রুশ গণমাধ্যম আরটি'র প্রতিবেদন বলছে, এর আগে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা মস্কোর হাই প্রোফাইল রাজনীতিবিদ বা সেনাপ্রধানদের হত্যার পরিকল্পনা করলেও, সাফল্য আসেনি। রুশ জেনারেল ইগর কিরিলোভ ও তার সহকারীকে হত্যার মধ্য দিয়ে মস্কোকে কড়া বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন জেলেনস্কি- এটাও অস্বীকার করতে পারছে না রুশ গণমাধ্যমগুলো।

গেল আগস্টে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুরস্কে প্রবেশ করে পুতিনের ডেঞ্জারবক্সে ভয় ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল কিয়েভ। এর ফলে, মস্কোকে পুরোপুরি কোণঠাসা করা সম্ভব না হলেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেন, যুদ্ধ বা অস্ত্রবিরতির আলোচনায় বার্গেনিং চিপস বা সমঝোতার হাতিয়ার হতে পারে রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের আধিপত্য। কিন্তু উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে সেনা পাঠানোর পর দুই প্রতিপক্ষ সেনাদের আঘাত সামলাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ইউক্রেন। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুতিন প্রীতি ও যুদ্ধে অনাগ্রহ।

এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যখন আচমকাই রুশ জেনারেলকে গুপ্তহত্যায় সাফল্য পেয়ে যায়, তখন কিয়েভের কৌশল ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলছে আন্তর্জাতিক নিউজ নেটওয়ার্ক সিএনএন। যেখানে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, পুতিন সেনাদের ওপর চড়াও হতে গিয়ে জেলেনেস্কির সেনাদের মধ্যে এক ধরনের তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা নির্দেশ করে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে কিয়েভ যথেষ্ট চাপে আছে।

এরই মধ্যে রুশ জেনারেল ইগর কিরিলোভ ও তার সহকারীকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটকের দাবি করেছে রুশ গোয়েন্দা বিভাগ। বলা হচ্ছে, সিকিউরিটি সার্ভিস অব ইউক্রেন বা এসবিইউ'র এর সরাসরি মদদে মস্কোর সুরক্ষিত এলাকায় বোমা হামলা চালায় ২৯ বছর বয়সি ঐ উজবেকিস্তানের নাগরিক।

এ অবস্থায় হাই প্রোফাইল জেনারেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর কোনো চাপ আসবে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা করে না, কাজেই সে সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে পুতিন প্রশাসনের যে কেউ হামলার স্বীকার হতে পারে।

রাশিয়ার ডয়চে ভেলের কূটনৈতিক বিশ্লেষক কনস্টিন এগোট বলেন, ‘পুতিন আপাতত কোনো চাপ পড়বেন না। কিন্তু এই হামলার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন রাশিয়াকে এই বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে যে, রুশ ভূখণ্ডে কেউই নিরাপদ নয়। যদি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া চড়াও হয়, তাহলে তারাও চুপ করে থাকবে না।’

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে কিয়েভ-মস্কো সংঘাতে একটি বিরতির সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এমনটা হলে, সক্ষমতার জানান দেয়া ছাড়া আলোচনার টেবিলে সুবিধা করতে পারবেন না জেলেনস্কি। তাই শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরো এক মাস।

এএম