জাপোরিঝিয়ার টুয়েন্টি সেভেন্থ আর্টিলারি ব্রিগেড। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর) ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যখন এই প্লাটুনের সৈন্যদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তখন পূর্ব ইউক্রেনে ধীরে ধীরে আধিপত্য বাড়াচ্ছে রুশ সেনারা। কুরস্ক অভিযানের সাফল্য ধরে রাখতে বারবার হোঁচট খাচ্ছে কিয়েভ।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জেলেনস্কি জানান, কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে না পারলে অর্থনৈতিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে ইউক্রেন। এজন্য ১০ থেকে ১২টি প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স প্রয়োজন বলেও জানান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।
যদিও এই মুহূর্তে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে জেলেনস্কি প্রশাসনের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে মার্কিন সহায়তা কমে যাবে এমন আশঙ্কার পাশাপাশি সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়েও বাড়বে ধোঁয়াশা।
তবে আপাতত জেলেনেস্কিকে খালি হাতে ফেরাচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহার করে রুশ ভূখণ্ডে আক্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, গেল মাসে তা তুলে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
এবার নতুন এক ‘সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স’ প্যাকেজের আওতায় কিয়েভকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র জন কারবি বলেন, ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত কিয়েভকে সহায়তা দিয়ে যাবেন বাইডেন।
সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স প্যাকেজের আওতায় ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এরমধ্যে, অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আর্টিলারি, ড্রোন এবং সাঁজোয়া যান থাকবে। নতুন এই সহায়তা প্যাকেজটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ৭২তম প্যাকেজ।'
এদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জোট প্রধান মার্ক রুট।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মোট জিডিপির যে তিন শতাংশ খরচ করে, ভবিষ্যতের জন্য তা অপর্যাপ্ত বলেও মনে করেন ন্যাটো প্রধান। ইউক্রেনকে সামনে রেখে মস্কো ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে যে শীতল যুদ্ধ শুরু করেছে তা প্রতিহত করতে কিয়েভের পাশে দাঁড়ানোও আহ্বান জানান তিনি।
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে যখন ন্যাটো প্রধান পুতিনের অগ্রযাত্রা থামানোর পরিকল্পনা করছেন তখন জার্মানির বার্লিনে বৈঠক করেছেন জোটের ছয় সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল।
এসময়, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে শান্তিচুক্তি কার্যকরে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন - যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তবে, রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি দাবি করছে, জেলেনেস্কি প্রস্তাবিত ওই 'নাইন্টিন নাইন্টি ওয়ান' সীমান্ত চুক্তি কোনোভাবেই মেনে নেবেন না পুতিন।
অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো মনে করেন, চলমান সংঘাত নিরসনে ইউক্রেন তার নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কিন্তু ইউরোপীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি জোটবদ্ধ হয়েই নিশ্চিত করতে হবে।
পোল্যান্ড সফরকালে ম্যাক্রো আরও বলেন, ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার সক্ষমতার সামনে কখনোই মাথানত করবে না। আর ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর গুজব উড়িয়ে দিয়ে পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে পশ্চিমারা ইউক্রেনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে এটা মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।