করোনা মহামারি এবং ইউক্রেনে রুশ অভিযানের জেরে দরিদ্র থেকে উন্নত সব দেশে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। যে ঝড়ো হাওয়ায় টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। ২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সীমা ছাড়ায় ১১ শতাংশ। অথচ একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯.১, জার্মানিতে ৮.৭, কানাডায় ৮.১ এবং ফ্রান্সে ৬.৯ শতাংশ।
এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে নেমে আসে অস্থিরতা। ব্যাপক চাপের মুখে ওই সময় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। পরে সেই হাল ধরেন ঋষি সুনাক। লিজ ট্রাসের তুলনায় বেশি সময় ক্ষমতায় থাকলেও তার দেয়া আগাম নির্বাচনের ঘোষণায় দেশটিতে আজ ভোট লড়াই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মে মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমে ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে ২০২২ এবং ২০২৩ সালের তুলনায় মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমলেও খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে এখনও বেশি অর্থ গুণতে হচ্ছে বলে দাবি যুক্তরাজ্যের মানুষের। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় 'ওএনএস'র তথ্যও একই কথা বলছে। যেখানে দাবি করা হয় তিন বছর আগের তুলনায় দেশটিতে খাদ্য পণ্যের দাম এখন ৩১ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে অত্যাধিক হারে বেড়েছে দুধ, চিনি ও মুরগির দাম।
কোনো কিছুতেই জীবনযাত্রার ব্যয়ে লাগাম টানতে না পাড়ায়, এবারের ভোটযুদ্ধে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোগ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে হটিয়ে ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে পারেন ব্রিটেনের ভোটাররা। বলছেন, দেশের কল্যাণে প্রয়োজন ক্ষমতার পরিবর্তন।
এক ব্রিটিশ নাগরিক বলেন, 'আমি লেবার পার্টিকে ভোট দেব, কারণ কনজারভেটিভরা আর ভালো নেই। আপনারা জানেন, সব জায়গায় পরিস্থিতি খারাপ। তাই মানুষ পরিবর্তন চায়। কনজারভেটিভরা দেশের জন্য সেরা কিছুই করেনি। তাই এবার তাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত।'
অপর একজন ভোটার বলেন, 'মানুষ পাঁচ বছর আগের তুলনায় অনেক খারাপ সংগ্রাম করছে। এই মুহূর্তে আমরা একটি জাতি হিসেবে যে পরিমাণ জীবনযাত্রার সংকটের মুখোমুখি হয়েছি তার উপর ভিত্তি করে কনজাভেটিভ পার্টিকে ভোট দেয়ার কথা ভাবাও যায় না। আমাদের পরিবর্তন দরকার।'
যুক্তরাজ্যের রেজোলিউশন ফাউন্ডেশন থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের গবেষণা তথ্য বলছে, ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন বেড়েছে ৪.৩ শতাংশ। অথচ আগের ১৬ বছরে এর প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪৬ শতাংশ। আর ২০২১ সালের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে সাপ্তাহিক গড় আয় ৫৮১ পাউন্ড থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮৭ পাউন্ড। এর ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়ায় ভোক্তাদের দামও বাড়ছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম-বিআরসি বলেছে যে, আগের মাসের তুলনায় জুন মাসে দোকান এবং সুপারমার্কেটে পণ্যের দাম কমেছে ০.২ শতাংশ। বাণিজ্য সংস্থার মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতিও ৩.২ শতাংশ থেকে কমে ২.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যা লক্ষাধিক পরিবারের জীবনযাত্রার খরচ সহজ করবে বলেও আশা করা হচ্ছে। তবে এই আশ্বাস ভোট লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়।