টানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনায় ব্রেক্সিট, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ এবং প্রধানমন্ত্রী পদে একের পর এক পরিবর্তনে কোণঠাসা ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি। এবার সংসদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষের প্রায় ছয় মাস আগে হঠাৎ জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তার এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি হতবাক ভোটাররাও।
অনলাইন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৪৭ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে লেবার পার্টি। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির জনসমর্থন ২০ শতাংশে ঠেকেছে। নাইজেল ফারাজের ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকে'র সমর্থন আছে প্রায় ১১ শতাংশ।
ব্রিটেনের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, অভিবাসীর সংখ্যা কমানো এবং অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় ফেরৎ পাঠানোর মতো কঠোর পদক্ষেপগুলো নিয়ে হঠাৎ করে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন ঋষি সুনাক। অন্যদিকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ে আসাসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে লেবার পার্টি।
কনজারভেটিভ পার্টির দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর শাসনকালে নানা নাটকীয়তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটে নাজেহাল ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রায় ৮০ জন সিনিয়র কনজারভেটিভ এমপির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবরে দুশ্চিন্তা বেড়েছে ঋষি সুনাকের।
ব্রিটিশ নাগরিকরা বলেন, এখানকার সবাই পরিবর্তন চাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সমর্থন খুব একটা নেই বললেই চলে। কনজারভেটিভ পার্টির দুর্নীতির কারণে তাদের সমর্থক অনেক কমে গেছে। আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিশ্বাস করি না। অন্যদিকে লেবার পার্টির দিকে সবাই ঝুঁকছে।
অভিবাসন প্রশ্নে নমনীয় হওয়ায় ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে লেবার পার্টির সমর্থন বেশি দেখা যায়। কনজারভেটিভ পার্টির তুলনায় লেবার পার্টির নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির অংশগ্রহণও বেশি।
অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী নাশিত রহমান বলেন, 'যখন কোনো নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ইমিগ্রেশনটা এতো কঠোর অবস্থায় আসে না। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক।'
ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, 'জরিপে দেখা যাচ্ছে লেবার পার্টি একটু এগিয়ে আছে। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে বিভাজন আছে। এটা তাদের জন্য কাল হতে পারে। আবার ঋষি সুনাক কিন্তু জনগণের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হননি।'
গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে এবারের নির্বাচনে। বিশেষ করে মুসলিম ভোট ব্যাংক ঝুঁকে আছে লেবার পার্টির দিকে। এছাড়া কনজারভেটিভ পার্টি থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থক রিফর্ম ইউকে পার্টির দিকে যাওয়ায় বিপদ আরও বেড়েছে কনজারভেটিভ পার্টির।