দুই দশক পর সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী হলো রাশিয়া

ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী হলো রাশিয়া। কনসার্ট হলে অতিথিরা যখন আচ্ছন্ন ছিলেন সুরের মূর্ছনায়, তখনই গেরিলা যোদ্ধার ছদ্মবেশে এলোপাথারি গুলি চালাতে শুরু করে একদল বন্দুকধারী। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় কমপক্ষে ১১৫ জনের, আহত শতাধিক। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। চার হামলাকারীসহ ১১ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।

এ হামলার মাধ্যমে ২০০৪ সালের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার কবলে রাশিয়া। সেবার তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে চেচেন স্বাধীনতাকামীদের হামলায় বেসলান শহরে একটি স্কুলে দেড়শ' শিশুসহ প্রাণ যায় তিন শতাধিক মানুষের। একই বছর পৃথক আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ যায় দু'টি বিমান আর একটি পাতাল রেলের প্রায় ১৩০ আরোহীর। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হামলা হলেও মস্কোতে শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে বন্দুকধারীদের হামলা হার মানিয়েছে গেল দুই দশকের সব সন্ত্রাসী হামলাকে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমি শপিং মলের বাইরে ছিলাম। হঠাৎ আতশবাজির মতো শব্দ শুনলাম। কিন্তু কী হচ্ছে কিছুই বুঝিনি। এরপর দেখলাম অনেক মানুষ দৌঁড়ে পালাচ্ছে। তারাই বলছিল গোলাগুলি চলছে কোথাও। আমি আহত ব্যক্তিদের দেখেছি। গোলাগুলি যখন হয়, তখন অনেক মানুষ মাটিতে পড়ে ছিল। কতজন আহত জানি না।'

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবি'র তথ্য, রাজধানীর উপকণ্ঠে স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে একটি কনসার্ট হলে তুমুল ভিড়ের মধ্যে এলোপাতারি গুলি চালাতে শুরু করে গেরিলা সেনার ছদ্মবেশধারী হামলাকারীরা। আতঙ্কে ছোটাছুটি আর গোলাগুলির এক পর্যায়ে ভবনে অগ্নিকাণ্ড ও ১৩ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়লে থিয়েটারের কাছেই ধসে পড়ে ছাদের একটি অংশ। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় অর্ধশতাধিক মানুষের, আহত হন শতাধিক।

রাশিয়ার মস্কোর গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিয়োভ বলেন, 'এখানে মর্মান্তিক পরিস্থিতি। পোড়া স্থানটিতে তো অবস্থা খুবই খারাপ। আগুন নেভানো ও পুরো উদ্ধারকাজ শেষ হলে হয়তো আরও কিছু তথ্য জানা যাবে।'

হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। এ বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতি মুহূর্তের খবর রাখছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা। তবে আইএসের সম্পৃক্ততা গ্রহণযোগ্য বলে মত রাশিয়ার প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইরাক-সিরিয়ার বড় অংশ দখল করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা আইএসের পতনের অন্যতম ভূমিকা ছিল রাশিয়ার। ওয়াশিংটনের দাবি, হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পৃক্ততা নেই।

হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেন, 'মস্কোতে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ভিড়ভাট্টা, শপিং মল এবং এ ধরনের সব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস আগেই সতর্ক করেছিল। এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেন বা ইউক্রেনীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ততার কোনো চিহ্ন এখনও আমরা পাইনি।'

রাশিয়ায় এ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ।

এসএস