১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাশিয়ায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের মতে, এ অবস্থা থেকে মস্কোকে বিশ্ববাসীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন পুতিন ও তার অনুসারীরা। বিশ্বে রাশিয়ার গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনেন তিনি। তবে পশ্চিমা নেতারা তাকে স্বৈরাচার ও ভয়ঙ্কর অপরাধী মনে করেন। যদিও রুশ জনগণের কাছে পুতিনের জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে।
১৯৯৯ সাল থেকে কখনও প্রেসিডেন্ট, আবার কখনও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাশিয়ার ক্ষমতায় আছেন সাবেক কেজিবির গুপ্তচর ভ্লাদিমির পুতিন। এবার জয়ী হলে তার ক্ষমতার মেয়াদ হবে ৩০ বছর। যা রাশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় শীর্ষপদে থাকার রেকর্ড। সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল ৪ থেকে বাড়িয়ে ৬ বছর করেন পুতিন। এছাড়া টানা দুই মেয়াদের পর প্রেসিডেন্ট থাকতে না পারার বাধ্যবাধকতাও তুলে নেয়া হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন তার বিরোধিতা ও ভিন্নমত একদমই দাঁড়াতে দেননি। এছাড়া, পুতিনের বিরুদ্ধে যে তিনজন প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই ক্রেমলিনের অনুসারী। বলা হচ্ছে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতার রূপ দিতে তাদের মনোনীত করা হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযানের বিরোধিতা করায় প্রার্থীতা হারিয়েছেন জনপ্রিয় দুই রুশ প্রার্থী বরিস নাদেজদিন ও ইয়েকাতেরিনা দান্তসোভা। সম্প্রতি পুতিনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালেক্সি নাভালনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। এবারের নির্বাচনে পুতিনের পথের কাঁটা বলতে কেউ নেই।
পুতিন বলেন, 'নির্বাচনের পর এবং ভোট গণনা শেষে সরকার বা মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলবো। এগুলো নিয়ে এখনই কথা বলার উপযুক্ত সময় না। তবে বর্তমান রুশ সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে তা স্পষ্ট উঠে এসেছে।'
রাশিয়া ও রাশিয়ার বাইরে সব জায়গা মিলে মোট ভোটার ১১ কোটি ৪২ লাখ। দেশটিতে প্রথমবারের মতো একদিনের পরিবর্তে আগামী তিনদিন ভোটগ্রহণ হবে। এছাড়া ২৯টির মতো অঞ্চলে অনলাইনে ভোট দেয়ার সুবিধা থাকছে এবার। ১০ বছর আগে রাশিয়ার অংশ হওয়া ক্রিমিয়া এবং চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিঝিয়া এবং খেরসন অঞ্চলে ভোট হবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ক্রেমলিনের করা এক জরিপে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রায় ৭৯ শতাংশ জনগণের কাছে পুতিন এখনও জনপ্রিয়। গত সপ্তাহের আরেকটি জরিপ বলছে, রাশিয়ার কমপক্ষে ৬১ ভাগ জনগণ অবশ্যই ভোটে অংশ নিবে। মাত্র ৯ শতাংশ ভোটদানে বিরত থাকবে। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ১৯ মার্চ ঘোষণা করা হবে। আর চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে ২৯ মার্চ।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না সে বিষয়ে সন্দিহান পশ্চিমা বিশ্বসহ অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে ভোটের আগে নানা ধরনের জরিপ নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আগের নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন। জাল ভোটও পড়েছিল অনেক।