এক দিনে হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের; ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিমান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা | ছবি: সংগৃহীত
1

পাইলট সংকটে টানা পাঁচ দিন ধরে নজিরবিহীন ফ্লাইট বাতিল করছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স। গতকাল (শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর) একদিনেই এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিলে ভারতজুড়েই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় লাখো যাত্রীকে। দিল্লি, মুম্বাই, পুনে, চেন্নাইসহ গুরুত্বপূর্ণ সবকটি বিমানবন্দরেই দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। এ সুযোগে অন্যান্য বিমানসংস্থাগুলো হঠাৎই ভাড়া দ্বিগুণ–তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্ডিগোর ব্যর্থতার পাশাপাশি ডিজিসিএ-এর দিকে আঙুল তুলছেন অনেকে। সমাধানে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের বিমানমন্ত্রী।

ভারতের বিমান পরিবহন বাজারে প্রায় ৬০ শতাংশের মালিকানাধীন ইন্ডিগো দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অপারেশনাল ব্যর্থতার মুখোমুখি। অর্থ ও সময় অপচয়ের দায় কে বা কারা নেবে এ প্রশ্ন ভুক্তভোগী যাত্রীদের। এ সুযোগে অন্যান্য বিমানসংস্থাগুলো ভাড়া দ্বিগুণ–তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি দিল্লি থেকে উদয়পুর ভ্রমণের জন্য ইন্ডিগোর একটি টিকিট বুক করেছিলাম। সেই ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। দিল্লি থেকে সমস্ত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এতে আমি সময়-অর্থ হারিয়েছি। তারপর আমি আহমেদাবাদের টিকিট বুক করেছিলাম, সেটিও বাতিল হয়েছে। এখন আমি কী করব? আমি অসহায়।’

টানা পাঁচ দিন ধরে ভারতজুড়ে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের শত শত ফ্লাইট বাতিলে চরম বিশৃঙ্খলা বিমান পরিবহন খাতে। শুক্রবার একদিনেই এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আজও (শনিবার, ৬ ডিসেম্বর) নির্ধারিত সময়ের ছাড়তে পাড়ছে না বাকি বিমানগুলো। বিমানবন্দরগুলোতে কোনো তথ্য, খাবার ও বিশ্রাম সুবিধা না দেয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন আটকে পড়া যাত্রীরা।

বিমান পরিষেবায় নিরাপত্তা আরও মজবুত করতে চলতি বছর পাইলট এবং বিমানকর্মীদের চাকরিবিধি নির্দিষ্ট করে দেয় ভারতের বেসামরিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। যার কারণে নজিরবিহীন ফ্লাইট বাতিলের ঘটনায় ইন্ডিগোর ব্যর্থতার পাশাপাশি ডিজিসিএ-এর দিকে আঙুল তুলছেন কংগ্রেসসহ অনেক রাজনীতিবিদ।

কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, ‘ডিজিসিএ নতুন ব্যবস্থা, কর্মঘণ্টা, বিভিন্ন ধরনের নিয়ম সম্পর্কে বিমান সংস্থাগুলিকে প্রচুর সতর্কতা দিয়েছিল। যার অর্থ তাদের আরও পাইলট নিয়োগ করতে হত। স্পষ্টতই একটি বিমান সংস্থা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার কারণে এখন ভ্রমণকারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমার মনে হয় এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

আরও পড়ুন:

যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি কেবল একটি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই, ডিজিসিএ এর আদেশ অনুসারে, ক্রুদের বিশ্রামের সময় সম্পর্কিত নিয়মগুলো দুইবছর আগে কার্যকর করার কথা ছিল। কেন ইন্ডিগো দুই বছর ধরে এগুলো উপেক্ষা করেছিল? ডিজিসিএ কেন ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? কেন ইন্ডিগোকে নিয়ম মেনে চলার জন্য চাপ দেয়া হল না? ডিজিসিএ কি এতটাই নির্দোষ।’

এমন পরিস্থিতিতে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে ইন্ডিগো। আগে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বর্তমানে তা কমিয়ে এনে দুতিনদিনের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও যাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।

ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দিন ছিলো। এদিন আমাদের দৈনিক ফ্লাইটের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি বাতিল করা হয়েছে। আমি, ইন্ডিগোর সকলের পক্ষ থেকে, আমাদের আমাদের অনেক গ্রাহকের জন্য এই বিরাট অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

ডিজিসিএ-এর নতুন বিধি নাকি ইন্ডিগোর অভ্যন্তরীণ কারণে নজিরবিহীন ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে তা জানতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু কিঞ্জারাপু।

ভারতের বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু কিঞ্জারাপু বলেন, ‘আমরা যেহেতু সমস্যাটি কেবল ইন্ডিগোতে লক্ষ্য করেছি, তাই বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছি। যারা এই সমস্ত কিছুর তদন্ত করবে। যাতে তাদের কোথায় ভুল হয়েছে এবং কে ভুল করেছে তা নির্ধারণ করতে পারে। সংকট সমাধানে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ডিজিসিএ ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’এর বিধি প্রণয়ন করেছিলো। পরে বিমানসংস্থাগুলোর অনুরোধে বারবার পিছিয়ে যায় কার্যকর করার সময়। চলতি বছর দিল্লি হাইকোর্ট ডিজিসিএ–কে বিধানটি কার্যকর করার নির্দেশ দেয়। এরপর জুন ও নভেম্বর—দুই ধাপে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়।

এসএস