জাপানের মসনদ সামলানো সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের পর, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পদটিতে এসেছে একাধিক পরিবর্তন। সবশেষ দেশটির ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এলডিপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর, চাপের মুখে পদত্যাগ করেন শিগেরু ইশিবা। এরপরই শুরু হয় দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার তোড়জোড়।
শনিবার ভোটের মাধ্যমে নতুন সভাপতি বেছে নেয় ক্ষমতাসীন এলডিপি। ৬৪ বছর বয়সী সানায়ে তাকাইচি শুধু দলটির সভাপতিই নন, বরং দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদের শক্ত প্রতিদ্বন্দী। সভাপতি নির্বাচিত হয়েই তিনি ঘোষণা দেন, এখন থেকেই কঠিন পথচলা শুরু হলো।
এলডিপির সভাপতি সানায়ে তাকাইচি বলেন, ‘জাপানের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে আরও অনেক কোম্পানি ও শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগে হওয়া চুক্তিগুলো বাতিল বা পরিবর্তন করতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কারোপের চাপ কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির কথা ভাবছেন তাকাইচি। আগামী ১৫ অক্টোবর দেশটির সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তিনিই হতে যাচ্ছেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তবে নানা সমস্যার সম্মুখীন দেশটির ক্ষমতার ভার সামলানো তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জাপানের সুরুগাদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নরিহিকো নোরিডা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনসংখ্যা কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন জাপান। এছাড়া, রাজনৈতিক উদ্বেগও রয়েছে। জাপানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।’
এলডিপি ও তার জোট শরিক কোমেইতো যেহেতু সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তাই আগামী সংসদ অধিবেশনে নতুন অংশীদার বাছাই এবং সরকার পুনর্গঠন এলডিপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নরিহিকো নোরিডা বলেন, ‘দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এলডিপির জোটসঙ্গী কোমেইটো। এখন সময় এসেছে একটি নতুন দল বেছে নেয়ার। যাদেরকে নিয়ে ত্রি-পক্ষীয় জোট হতে পারে । তবে এটি কতদিন টিকবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কোমেইটো আসন হারাচ্ছে। তৃতীয় জোটসঙ্গী হিসেবে জাপান ইনোভেশন পার্টিকে বেছে নিলেও এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় থাকা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
১৯৫৫ সালে ডেমোক্র্যাটিক লিবারেল পার্টি গঠনের পর থেকে অধিকাংশ সময়ই কোন না কোনভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছে দলটি।





