দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি উপত্যকার বুকে সোভিয়েত আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক বিমানঘাঁটি বাগরাম। ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের মূল ঘাঁটি ছিল এটি। তৎকালীন সরকার পতনের আগে আগে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার চুক্তির অংশ হিসেবে দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে বাগরাম ছেড়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
চার বছরের মাথায় আবারও বাগরামের নিয়ন্ত্রণ ফেরত চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারের (১৮ সেপ্টেম্বর) যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে আভাস দেন। দুই নেতার মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, সেটি ধোঁয়াশায় থাকলেও কেন হঠাৎ বাগরাম ফেরত চাইছেন, ছোট্ট করে সে আভাস দিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাগরামকে ধরে রাখতেই যাচ্ছিলাম। বিশ্বের বৃহত্তম বিমানঘাঁটিগুলোর একটি, বিশাল এ বিমানঘাঁটি আমরা বিনামূল্যে তাদের ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমরা এটি ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। এটি একটা দুর্দান্ত খবর হতে পারে। আমরা এটা ফেরত চাই কারণ তাদেরও আমাদের কাছ থেকে কিছু প্রয়োজন। আমরা সেই ঘাঁটিটি ফিরে চাই। আমরা যে ঘাঁটিটি চাই তার একটি কারণ হলো, আপনারাও জানেন, চীন যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে, সেখান থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত এটি।’
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান শক্তি চীন। বাগরাম থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে চীন, এমন দাবির মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তা স্পষ্ট নয়। তবে গেলো জুলাই মাসে বিবিসি ভেরিফাইয়ের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চীনের উত্তর-পশ্চিমে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে একটি পারমাণবিক পরীক্ষাকেন্দ্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত বাগরামের দু'টি রানওয়ের একেকটি, প্রায় ১২ হাজার ফুট দীর্ঘ এবং অত্যাধুনিক, ভারী মার্কিন সামরিক উড়োযান ধারণে সক্ষম, যেগুলো সংস্কার ও নির্মাণে শত-কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:
ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে বাগরামে চীনের উপস্থিতি জোরদার হয়েছে। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিবিসি'র অনুসন্ধান বলছে, তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে বাগরাম প্রায় স্থবির, ঘাঁটিটিতে চীনের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ মেলেনি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘আফগানিস্তানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে চীন। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ দৃঢ়ভাবে আফগান জনগণের হাতে থাকা উচিত। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে এ অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করা এবং সংঘর্ষ তৈরি করার ফল ভালো হয় না। আমরা আশা করি সব পক্ষ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।’
বাগরামে মার্কিন সেনাদের ফেরত আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে কাবুল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল (শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জানান, এ ধরনের কোনো চুক্তিতে সায় নেই তালেবান শাসকগোষ্ঠীর। বিবৃতিতে বলা হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থ রক্ষার বিনিময়েই কেবল আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্ক হতে পারে দুই দেশের।
আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ২০ বছর পর ক্ষমতায় ফেরা তালেবান শাসকগোষ্ঠীকে দেশটির সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন প্রশাসন। তবে আফগানিস্তানে আটক মার্কিন নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি তালেবানশাসিত কাবুলের সাথে আলোচনা শুরু করেছে ওয়াশিংটন।





