দ. কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্তে দু’জন বাদে ১৮১ যাত্রীর সবারই মৃত্যু

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

দক্ষিণ কোরিয়ায় জেজু এয়ারের ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, আজ (রোববার, ২৯ ডিসেম্বর) সকালে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ১৮১ জন আরোহী বহনকারী বিমানটি থেকে মোট ১৭৯ জন নিহত ও দু’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, দুর্ঘটনায় বিমানটির ১৭৫ জন যাত্রীর সব ও চারজন ফ্লাইট কর্মী নিহত হয়েছেন।

জীবিত দুই ক্রু সদস্যকে বিমানের টেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা বেশ গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলাররা বিমানকে পাখির আঘাতের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর মুয়ান বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

আজারবাইজানি এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা দেখলো বিশ্ব। রোববার স্থানীয় সময় ৯টায় জেজু এয়ার জেট লাইনারের বোয়িং সেভেন-থ্রি-সেভেন-এইট হান্ড্রেড ফ্লাইট এওয়ার মডেলের একটি বিমান দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে আসছিল বলে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা ইওনহাপ।

এপির তথ্য বলছে, ল্যান্ডিং গিয়ার অকেজো হয়ে পড়ায় এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, শুরুতে বিমানের পেট বা মাঝামাঝি অংশে আগুন লাগে। পরবর্তীতে তা বিমানের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি দুর্গতদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চো সেং মক। গেল শুক্রবারই প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ কোয়ীয় পরিবহন মন্ত্রণালয় আরও জানাচ্ছে, এ ঘটনার পরপরই মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চো সেং মক। এছাড়া, অতিদ্রুত বিমানবন্দরটি সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন দেশটির ভূমি ও পরিবহনমন্ত্রী।

দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি ও পরিবহন মন্ত্রী পার্ক স্যাং-হু বলেন, ‘পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। উদ্ধার অভিযান ও বিমানবন্দর সংস্কার করতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই, তদন্তে কোনো ধরনের ফাঁক রাখা হবে না।’

পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিফ্রিং থেকে সিএনএন জানায়, বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মৃত যাত্রীদের দেহাবশেষ সংগ্রহ করেছে উদ্ধারকারী দলটি। দক্ষিণ কোয়ীয় সেনাবাহিনীর তথ্য বলছে, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও সেনাসদস্যের ৭শ জনের একটি দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে। মরদেহ শনাক্তে জেজু এয়ারলাইন্সের কাছে প্রয়োজনীয় নথি চেয়েছে মুয়ানের দমকল বিভাগ। বলা হচ্ছে, গেল ৩ দশকে এমন ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা দেখেনি দেশটির জনগণ।

সিএনএন জানায়, আগুনে বিমানের বেশিরভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পেছনের অংশ তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখান থেকে দুই ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার দমকল বিভাগ। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে থাইল্যান্ডের দুই নাগরিক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে গার্ডিয়ান। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এই দুই জন থাই নাগরিক ছাড়া বিমানের বাকি সকল যাত্রীই দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দা।

দুর্ঘটনার পর নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়েছে জেজু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের অঙ্গীকার করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেজু এয়ার জেট লাইনারের বোয়িং বিমানটি সীমিত আয়ের যাত্রীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। এই দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত এর সেফটি রেকর্ড নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি।

স্থানীয় সময় ১০টার কিছু পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে বিশেষ তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আলামত সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে প্রাথমিক তদন্ত। দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, এমন একটি সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটলো যখন নেতৃত্ব সংকটে টালমাটাল দেশটির রাজনীতি। প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলের অপসারণের দুই সপ্তাহের মাথায় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু কেও অভিশংসনের পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট।

এএম