এশিয়া
বিদেশে এখন
0

আজ শ্রীলঙ্কায় ভোট, এগিয়ে তিন প্রার্থী

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় চলছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আজ (শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে ভোট চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। এবারের নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৩৮ জন প্রার্থী অংশ নিলেও জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন হেভিওয়েট তিন প্রার্থী। শনিবার ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হবে গণনার কাজ। ফলাফল আসতে পারে আগামী রোববার।

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। দু'বছর আগে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ দেখেছিল বিশ্ব। জনরোষের মুখে পালাতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে। সংসদে ভোটাভুটির পর অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত লঙ্কানদের দায়িত্ব দেয়া হয় রনিল বিক্রমাসিংহেকে।

গণ আন্দোলনের দু'বছর পর আজ আবার নতুন নেতা বাছাইয়ের সুযোগ পাচ্ছেন দেশটির জনগণ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, এই নির্বাচনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ। আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে বসতে যাচ্ছে লঙ্কার মসনদে, তার ওপর নির্ভর করছে একটা গোটা দেশের অর্থনৈতিক লড়াই।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা চাই, দেশের মানুষ নিরাপদে থাকুক। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো দরকার। যাদের জন্য বেঁচে থাকাটাই একটা লড়াই, নেতারা তাদের পাশে থাকবে। এর চেয়ে বেশি আর কিছুই চাইনা।'

অন্য একজন ভোটদাতা বলেন, 'বর্তমান প্রশাসনের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। এই প্রশাসন বদলাতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ বদলাবে না। নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম আমাদের নাগালের বাইরে।'

ভোট গ্রহণের আগে কেন্দ্র পরিদর্শনের পর সন্তোষ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান সামান রাতনায়েক।

তিনি বলেন, 'বিগত বছরের তুলনায় বেআইনি কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনা কম চোখে পড়েছে। তবে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে।'

র‌্যাঙ্কড ভোটিং সিস্টেমের আওতায় প্রত্যেক লঙ্কান ভোটার একই সাথে তিন জন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। একে বলা হয় প্রেফারেন্সিয়াল ভোটিং। একজন প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ৫০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেতে হবে। তা না হলে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা বা রান-অফ ভোট হবে। সব ঠিক থাকলে রোববারের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

এবারের নির্বাচনে ৩৯ জন প্রার্থী অংশ নেয়ার কথা থাকলেও একজন মারা যাওয়ায় ভোটের লড়াই হবে ৩৮ জনের মধ্যে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ঠিক তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েক। আর, জনমত জরিপে ৩৬ পয়েন্ট পাওয়া কুমারা দিশানায়েকের সাথে সরাসরি টক্কর দেয়ার ঘোষণা চার পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা এসজেবি নেতা সাজিথ প্রেমাদাসার। মূলত এই তিন হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়েই চলছে হার-জিতের ত্রিকোণমিতি।

২০২২ সালে ডলার সংকটে কারণে ধসে পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। বিদ্যুতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত। যদিও গত মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে। গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম জিডিপি বাড়ার পূর্বাভাসও দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে এখনও নিশ্চিন্ত হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানাচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাব্রি।

তিনি বলেন, 'আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে, আমরা এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারিনি। দু'বছরে সব সমস্যার সমাধান হবে-আপনি এমনটা আশা করতে পারেন না। তবে বিগত সময়ের তুলনায় এই সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে সার সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সরকার তাদের পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে।'

দেশটিতে ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখ। দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে বিপুল সংখ্যক লঙ্কান। তাই এবারের নির্বাচনে বারবার উঠে আসছে অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত কার ওপর ভরসা করতে যাচ্ছেন লঙ্কানরা, এখন সেদিকেই নজর থাকবে বিশ্বের।

এসএস