গেলো মে মাসেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক দশক পূর্ণ করা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নজর এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতা ১০ বছর পার করা বিরল হলেও এ কাজটিই করে দেখিয়েছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সরকারপ্রধান ছিলেন দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। বুথফেরত জরিপের ফল মিলে গেলে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে জয়ে নেহরুর পরে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়বেন ৭৩ বছর বয়সী মোদি। এ খবরে এরইমধ্যে রেকর্ড দরবৃদ্ধি দেখছে ভারতের পুঁজিবাজার। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা পেলে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবেন এই বিজেপি নেতা। নির্বাচনে তার শক্ত অবস্থানের পেছনে কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধিকে।
২০১৪ সালে যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মোদি, সে সময় বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান ছিল দশম। ১০ বছরের ব্যবধানে পঞ্চম শীর্ষে উঠে আসা দেশটির বর্তমান বার্ষিক প্রবৃদ্ধি তিন লাখ ৪১ হাজার কোটি ডলার। তাই রাজনৈতিক সমীকরণ আর প্রত্যাশা অনুযায়ী মোদি আবারও প্রধানমন্ত্রী হলে অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত করার দিকেই মন দেবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের একটি আইন, ক্ষমতার প্রথম বছরই সংশোধনের চেষ্টা করেছিলেন মোদি। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে শক্ত প্রতিরোধের মুখে পিছু হঠে বহাল রাখেন 'জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও স্বচ্ছতার অধিকার আইন ২০১৩'।
ইকোনমিক টাইমস বলছে, এবার ক্ষমতায় এলে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমেই জাতীয় অর্থনীতি ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করতে পারেন মোদি। আইনটি সংশোধনে প্রতিরক্ষা, অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিভিন্ন প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে সরকার।
এছাড়া জমির তথ্য রেকর্ড ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনেও কাজ করছে মোদি প্রশাসন। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের সকল জমি সংক্রান্ত তথ্যের ডিজিটাল রেকর্ড তৈরিতে নতুন মেয়াদে ১ হাজার কোটি রুপির বেশি অর্থ বরাদ্দের পরিকল্পনা আছে দিল্লির।
জয় অবধারিত ধরে নিয়ে চরম আত্মবিশ্বাসী মোদি এরইমধ্যে সাজিয়ে ফেলেছেন নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা। মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন আগামী পাঁচ বছরের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা 'ভিক্সিত ভারত ২০৪৭' নিয়েও। স্বাধীনতার শতবর্ষপূর্তির আগেই ভারতকে উন্নত দেশে রূপ দিতে এ রোডম্যাপ নিয়েছে বিজেপি সরকার। সংস্কারের সম্ভাব্য লক্ষ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা, রেলের আধুনিকায়ন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং, উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাত।
দ্বিতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের মেইক ইন ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে উৎপাদন বাড়াতে নানা ব্যবস্থা নেয়া হলেও বৈশ্বিক উৎপাদনে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের অংশীদারিত্ব তিন শতাংশেরও কম। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য, জনসংখ্যায় ভারতের পরে থাকা প্রতিবেশি চীনের বৈশ্বিক উৎপাদন ২৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, মোদির আমলেই বেকার সমস্যাও প্রকট হয়েছে ভারতে। গেলো এপ্রিলে দেশটিতে বেকারত্বের হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, যা এক মাস আগেও ছিল সাড়ে সাত শতাংশের কম।