আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় চারগুণ বড় মিয়ানমার। বাংলাদেশ ছাড়াও দেশটির সঙ্গে আছে ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ডের দীর্ঘ সীমানা। গত তিন বছরে রাজনৈতিক ও জাতিগত সংঘাতে দেশটির ২৬ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিকভাবে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে।
অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এতে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। ধীরে ধীরে তা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়।
সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে সুসংগঠিতভাবে হামলা চালায় জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী। যারা 'থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স' নামে পরিচিত। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী আরাকান আর্মি। এখন প্রায় ৫২ শতাংশ ভূখণ্ড এই বিদ্রোহীদের দখলে। তাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে শত শত জান্তা বাহিনী প্রতিবেশি দেশে পালিয়ে যাচ্ছে।
গত নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর ৭ শতাধিক সেনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আবারও ভারতে অনুপ্রবেশ করে সেনারা। এবার বেশিরভাগ সেনাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় ভারত। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বাতিলের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল ও নাগাল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার। এতদিন পর্যন্ত এসব সীমান্তে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। দুই দেশের নাগরিকরা নথিপত্র ছাড়াই দুই দেশের ভেতর ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচল করতে পারতেন।
উপায় না পেয়ে মিয়ানমার সেনারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে। বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে কয়েকদিনে ৩ শতাধিক জান্তা সেনা সাগর ও পাহাড় পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মিরা তাদের দখলে নিয়েছে। সেখানে সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দা। এমনিতে ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এর ওপর রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশ হলে বিপদ বাড়বে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশে পালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশসহ ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা আছেন। তাদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম চলছে।
জান্তা সেনারা যে যেদিকে পারছে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের বড় একটি অংশ চীনেও আশ্রয় নিয়েছে। পশ্চিমা শক্তির প্রবেশ ঠেকাতে সামরিক জান্তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন ও রাশিয়া। সরকার এবং বিদ্রোহী দুই দিকেই সংযোগ ও সমর্থন যোগাচ্ছে চীন। মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে চীনের বিপুল বিনিয়োগ ও বাণিজ্য। সেগুলো নিরাপদ রাখা তাদের মূল লক্ষ্য। এদিকে থাইল্যান্ড মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুতদের জন্য মানবিক করিডোর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।