এশিয়া
বিদেশে এখন
0

বিপর্যস্ত মিয়ানমারের অর্থনীতি, কোণঠাসা সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ৩ বছরের মাথায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি জান্তা সরকার। বিদ্রোহীদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে একের পর এক অঞ্চলের দখল হারিয়ে কোণঠাসা সেনাবাহিনী। চরম নৈরাজ্যের মধ্যে ভেঙে পড়ছে দেশটির অর্থনীতি-রাজনীতি।

বিদ্রোহীদের আক্রমণে নাজেহাল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ষষ্ঠ শীর্ষ সামরিক শক্তি মিয়ানমার। মাত্র কিছুদিন আগেই দোর্দণ্ড প্রতাপে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা সেনারা এখন নিজেদেরই প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তপথে পালিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়াসহ প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশে। জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে শুধু ভারতেই পালিয়ে গেছে ৪শ'র বেশি সেনা।

পর্যবেক্ষক সংস্থা মিয়ানমার পিস মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে জান্তা সরকারের হাতে নেই। শহরগুলোর নাম নিশ্চিত না করলেও দেশের কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। কেবলমাত্র বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে চীন সীমান্তে সংঘাত বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সব অঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, গেলো ১০ ও ১১ জানুয়ারি চীনের দিক থেকে প্রচার ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোকাং, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও আরাকান আর্মিসহ তিনটি স্থানীয় সশস্ত্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে শান্তি আলোচনায় বসানো হয়। চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে তারা চুক্তিতে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্তে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করে।

মিয়ানমারে আদিবাসীদের কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন একজোট হয়ে গেলো অক্টোবর থেকে চালাচ্ছে আগ্রাসী আক্রমণ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মূলত তিনটি বিদ্রোহী বাহিনীর সমন্বিত হামলায় দিশেহারা সেনারা। 'অপারেশন ওয়ার-জিরো-টু-সেভেন' নামক অভিযানে অংশ নেয়া অন্যতম বাহিনী আরাকান আর্মি। অভিযানের অগ্রগতিতে সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পালে হাওয়া পেয়েছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বিদ্রোহীরাও। এমন পরিস্থিতিতে গেলো সপ্তাহে অভ্যুত্থানের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় সপ্তাহ বাড়ান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।

তার ভাষ্যমতে, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার এ সময়। তবে এতে আস্থা রাখতে পারছে না খোদ সামরিক শাসনের সমর্থকরাও।

মিয়ানমার জান্তার সমর্থক সংবাদভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থুরিয়া নায় উনই প্রশ্ন তুলেছে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। বছরের শুরুতেই অপারেশন ওয়ান-জিরো-টু-সেভেনে লুক্কাই শহরে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হারানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোয়ে হেইং। বৌদ্ধ ভিক্ষু থেকে শুরু করে ইউটিউবার- সব শ্রেণি এমনকি কট্টরপন্থি সেনা সমর্থকরাও ৬৭ বছর বয়সী সেনাপ্রধানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর অনলাইন সংস্করণে শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান আর নৌবাহিনীকে সাথে নিয়েও বিদ্রোহী দমনে পিছিয়ে পড়ছে সশস্ত্র বাহিনী। বিশেষ করে যেখানে শুধুমাত্র পায়ের ওপর ভর করে অস্ত্র হাতে এলাকার পর এলাকায় দখলে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের নেতৃত্বভার দখলের পর থেকে কমপক্ষে ১শ' কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম মিয়ানমার সেনাবাহিনী কিনেছে বলে গেলো মে মাসে জানায় জাতিসংঘ।

চিন-রাখাইন ছাড়াও সংঘাত চলছে শান, কায়াহসহ আরও কয়েক প্রদেশে। উত্তরাঞ্চলে চলমান সহিংসতায় খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যেতে পারে পুরো মিয়ানমার, সম্প্রতি এমন শঙ্কা জানান খোদ সেনাবাহিনীর নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ত সোয়ে।