স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চান থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার বাস্তুচ্যুতরা

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চান বাস্তুচ্যতরা
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চান বাস্তুচ্যতরা | ছবি: সংগৃহীত
0

কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতে স্থবির থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর মানুষের জনজীবন। বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের সৈন্যরা সংঘাতে লিপ্ত হওয়ায় জীবন বাঁচাতে মাঝে মধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছে দুই দেশের লাখ লাখ বাসিন্দা। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে উভয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। সংকটের জন্য দুই দেশের সরকারকে দায়ী করে সংঘাতের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক পক্ষের হস্তক্ষেপ চান থাই-কম্বোডিয়ার বাস্তুচ্যুতরা।

কম্বোডিয়ার হামলায় নিহত এক থাই সেনার কুকুর মালি। এ নিরীহ প্রাণী জানে না যুদ্ধের মানে, সীমান্ত বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব কী তাও ওর অজানা। তাইতো এ অবলা প্রাণীটিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় প্রভুর কফিনের পানে। এটাই যে তাদের শেষ বিদায়, তাও হয়তো বুঝার ক্ষমতা নেই কুকুরটির।

এ তো গেল একটি প্রাণীর কথা। পান্না ত্রিভুজ নামে একটি বিতর্কিত ভূখণ্ডের দাবিকে কেন্দ্র করে ১১৮ বছর ধরে দ্বন্দ্বে ব্যাংকক ও নমপেন। বিরোধ তীব্র হয়, ২০০৮ সালে কম্বোডিয়ার বিতর্কিত অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করার প্রয়াস নিলে। এটিকে মেনে নিতে পারেনি ব্যাংকক।

এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত সংঘাতে লিপ্ত থাই-কম্বোডিয়া সৈন্যরা। যার সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছে দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দা।

রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণে মাঝে-মধ্যেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে হয় তাদের। এতে ব্যাহত তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘন ঘন সীমান্ত সংঘাতের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে উভয় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যও।

এবারের সংঘাতে কম্বোডিয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে ঘর ছাড়াদের একজন ৬২ বছর বয়সী মার ক্লাই। জীবন বাঁচাতে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি ।

রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্লাই জানান, থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা। এর আগেও সংঘাত থেকে বাঁচতে ভিটেমাটি ছেড়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেন ক্লাই।

আরও পড়ুন:

আমার এখনো মনে আছে খেমার রুজের মেয়াদকালে নিজের জন্মভূমি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়ার কথা। বেশ কয়েক বছর সেখানে ছিলাম। এরপর কম্বোডিয়ার সরকার পরিবর্তন হলে জন্মস্থানে ফিরে যাই।

এসময় ক্লাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সরকারের প্রতি। জানান, উভয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন শান্তি চাইলেও, ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যেতে চায় দুই দেশের শাসকেরা।

দশকের পর দশক ধরে আমরা মিলেমিশে বাস করছি। আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যা দ্বন্দ্ব দুই দেশের সরকারের মাঝে। বিশেষ করে থাই সরকার আমাদের কিছু ভূখণ্ডের দখল নিতে চায়।

ঘরবাড়ি চেয়ে পালিয়ে আসা থাইল্যান্ডের বাস্তুচ্যুতরাও ক্ষোভ ঝাড়েন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

সীমান্ত সংঘাত নিরসনে থাই সরকার কখনো আন্তরিক ছিল না। এর আগেও বেশ কয়েকবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি।

আমি মনে করি থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী থাকা বা না থাকা একই কথা। কেননা কারও আমলেই কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সাময়িক নয়, দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত সংঘাত মেটাতে আন্তর্জাতিক পক্ষের হস্তক্ষেপও চান দুই দেশের বাস্তুচ্যুতরা।

এসএইচ