ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক যুদ্ধজাহাজ, হাজারো মার্কিন সেনা মোতায়েনে দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভেনেজুয়েলা-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান চালালে তা প্রতিহত করার জন্য বরাবরই প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আসছে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলার তেলের মজুত দখলের চেষ্টার অভিযোগ এনেছে মাদুরো সরকার। মার্কিন আগ্রাসন প্রতিহত করতে পেট্রোলিয়াস রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের কাছে সহায়তাও চেয়েছে।
যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ বলছে তেলের কারণে নয়, বরং ভেনেজুয়েলা থেকে অনিয়মিত অভিবাসী ও মাদকের প্রবাহ ঠেকাতেই এই সামরিক প্রস্তুতি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাদুরোর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য তার দেশের ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেলের বিশাল তেল মজুত।
ভেনেজুয়েলা বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রমাণিত তেল ভাণ্ডারের মালিক—যা মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ বা টেক্সাসের চেয়েও বেশি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে দিনে মাত্র ১০ লাখ ব্যারেলে। যা ১৯৯৯ সালের উৎপাদিত তেলের এক–তৃতীয়াংশ মাত্র।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনকারী হলেও দেশটি এখনও তেল আমদানির জন্য ভেনেজুয়েলার ওপর নির্ভরশীল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত তেল শুধু পেট্রোল তৈরির জন্য ভালো। আর ডিজেল, অ্যাসফল্ট এবং ভারী শিল্পের জ্বালানি তৈরিতে ভেনেজুয়েলায় উৎপাদিত ভারি ক্রুড তেলের কোনো বিকল্প নেই।
ইউএস এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভেনেজুয়েলা থেকে প্রতিদিন ১ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল আমদানি করছে। রাশিয়ার ভারী তেলের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার তেলের মিল রয়েছে। এজন্য ভারত ও চীন রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। ভেনেজুয়েলার উৎপাদন বাড়লে রাশিয়ার তেলের বিকল্প তৈরি হবে। এতে দুর্বল হবে রাশিয়ার যুদ্ধ–অর্থনীতি।
তাই বিশেষজ্ঞদের বলছেন, বর্তমান উত্তেজনা কেবল ভূ–রাজনৈতিক টানাপড়েন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্বের বৃহত্তম তেল ভাণ্ডার, মার্কিন জ্বালানি নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিল সমীকরণ। ভেনেজুয়েলায় শাসন পরিবর্তন হলে তা শুধু দেশটির জন্য নয়, বৈশ্বিক তেলের বাজারেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।





