ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছেন একদল বিক্ষোভকারী। কেউ পড়েছেন কমলা রঙের পোশাক। কারো মুখে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর চেহারার আদলে গড়া মুখোশ। কমলা রঙের এ জামা মূলত কয়েদিদের পোশাক।
দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা ঘুষ, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত ৩টি মামলা বিচারাধীন। গাজায় অভিযানের কারণে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততাসহ নানা অজুহাতে এসব মামলার শুনানি পিছিয়ে দেয়া হয়। যদিও শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, যদি কোনো অপরাধ নাই করে থাকেন, তাহলে কেন নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘আমরা এখানে ক্ষোভ জানাতে এসেছি। ভালো করেই জানি, ইসরাইলের গণতন্ত্রের জন্য আমাদের চলমান সংগ্রাম, তিনি একটি দুর্বল দিক।’
আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কিংবা পদত্যাগ করলেও নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করা উচিৎ হবে না বলে মনে করেন জেরুজালেমের অনেক বাসিন্দাই।
জেরুজালেমের বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি যদি মামলায় হাজিরা দিতে নাই পারেন তাহলে তার পদত্যাগ করা উচিত। খুব খুশি হবো যদি উনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এবং এই মামলায় তার সাজা হোক।’
আরও পড়ুন:
এরআগে নিজ দল লিকুদ পার্টির প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে তার আইনজীবীরা চলমান মামলায় ক্ষমার আবেদন জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুর যুক্তি ছিল, ফৌজদারি কার্যক্রমের কারণে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এবং তিনি ক্ষমা পেলে ইসরাইলের সাধারণ মানুষই উপকৃত হবেন।
রোববার নেতানিয়াহুর ক্ষমার আবেদন সম্বলিত চিঠি প্রকাশ করেছে ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের অফিস। তবে কোনো মন্তব্য করেননি আইজ্যাক হারজগ। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশেষ ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা মামলা এখনও প্রক্রিয়াধীন।
আইন বিশ্লেষক ড. রোনিত লেভিন-স্নুর বলেন, ‘আসরাইুল আইনে ক্ষমা সংক্রান্ত কোনো নিদিষ্ট প্রক্রিয়ার কথা বলা নেই। রাষ্ট্র প্রদত্ত এ ক্ষমতা শুধু আসরাইলি প্রেসিডেন্টের। এই ক্ষমতার ওপর খুবই সীমিত বিচারিক পর্যালোচনার সুযোগ আছে। কিন্তু এটি শুধু অপরাধীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রচলিত ব্যাখ্যায় তারাই অপরাধী যারা এরইমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।’
৩টি মামলা থেকে নেতানিয়াহুকে নিষ্কৃতি দেয়ার অনুরোধ করে গেল অক্টোবরে ইসরাইলি প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরআগে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী যখন ওয়াশিংটন সফরে যান, তখনও এই একই প্রস্তাব এসেছিল ট্রাম্পের পক্ষ থেকে।
দুর্নীতির মামলায় ক্ষমা চাওয়ায় নেতানিয়াহুর প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন ইসরাইলের সাধারণ মানুষ। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি প্রশাসনের নীতিগত সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একাধিক গণমাধ্যম বারবার বলে আসছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে গাজায় যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে চান ৭৬ বছর বয়সী যুদ্ধবাজ এই নেতা।




