অটোপেন বিতর্কে ট্রাম্পের হুমকি, বাইডেনের আদেশ কি সত্যিই বাতিল করতে পারবেন?

অটোপেন ও বাইডেন স্বাক্ষর করছেন
অটোপেন ও বাইডেন স্বাক্ষর করছেন | ছবি: এখন টিভি
0

অটোপেন ব্যবহারের দাবি করে বাইডেনের আমলের সব নির্বাহী আদেশ বাতিলের হুমকি দিলেও হোয়াইট হাউজের ইতিহাসে এ পেনের ব্যবহার নতুন নয়। দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন থেকে শুরু করে বারাক ওবামা এমনকি ট্রাম্প নিজেও এটি ব্যবহার করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে এখন বড় প্রশ্ন, ট্রাম্প কি আসলেই বাইডেনের নির্বাহী আদেশগুলো বাতিল করতে পারবেন?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একরকম হঠাৎ করেই সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে জারি করা সব নির্বাহী আদেশ বাতিলের ঘোষণা দেন। দাবি করেন, বাইডেনের সময় প্রায় ৯২ শতাংশ নির্বাহী আদেশ, স্বাক্ষর নকল করার যন্ত্র অটোপেন ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছিল। সেই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এমনকি প্রয়োজন হলে বাইডেনের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনায় হোয়াইট হাউজের অটোপেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অটোপেন আবিষ্কৃত হয় ১৮০৩ সালে। এটি মূলত একটি রোবট যন্ত্র যেটি যে কারও স্বাক্ষর কলমের কালি ব্যবহার করেই নকল করতে সক্ষম। অনেক বেশি নথিতে স্বাক্ষর করতেই এর ব্যবহার।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ২০০৫ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, আইনে পরিণত করার অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্টকে সরাসরি সেই বিলে স্বাক্ষর করার প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি অটোপেনের মতো বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

এবার প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কি বাইডেন একাই এ পেন বা কলম ব্যবহার করেছেন নাকি হোয়াইট হাউজে এটি নিত্যদিনের ঘটনা!

আরও পড়ুন:

হ্যাঁ, বাইডেন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্টই এ পেন ব্যবহার করেছেন। শ্যাপেল ম্যানুস্ক্রিপ্ট ফাউন্ডেশনের মতে, এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ড থমাস জেফারসন-এর সময় থেকে। তবে সেটি এখনকার সময়ের অটোপেনের মতো ছিল না। তেত্রিশতম প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানও এটি ব্যবহার করতেন বলে গুজব রয়েছে। সেই সঙ্গে জেরাল্ড ফোর্ড, লিন্ডন বি জনসনও এটি ব্যবহার করতেন বলে শোনা যায়। এটি ব্যবহারের তালিকায় আছেন জন এফ কেনেডি এমনকি বারাক ওবামাও।

বাইডেনের অটোপেন ব্যবহার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেও খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পই এটি ব্যবহার করেছেন। গত মার্চে নিজেই একথা জানিয়েছেন। তবে সেটিকে গুরুত্বহীন কাগজ বলে সম্বোধন করেছিলেন ট্রাম্প।

বাইডেনের সময়ের নির্বাহী আদেশের ৯২ শতাংশ তার অনুমোদন ছাড়া অটোপেন ব্যবহার হয়েছে, ট্রাম্প এমন দাবি করলেও গার্ডিয়ান বলছে, সেসময় কি পরিমাণ নথিতে অটোপেন ব্যবহার হয়েছে তার কোনো প্রমাণ নেই।

অক্টোবরে রিপাবলিকানদের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি বাইডেনের অটোপেন ব্যবহারের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে এ ধরনের নথির পরিমাণ অনেক দাবি করা হলেও সেগুলো বাইডেনের অনুমতি ছাড়া স্বাক্ষর হয়েছে তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ডেমোক্রেটরা এটিকে প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তার আগেই এসব আদেশের সিদ্ধান্তে নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছেন বাইডেন।

তবে বাইডেনের অটোপেন ব্যবহারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসাকে ট্রাম্পের কৌশল হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। চলতি বছরের শুরুতে হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল গ্যালারিতে বাইডেনের ছবির জায়গায় ট্রাম্প একটি অটোপেনের ছবি ঝুলিয়েছিলেন।

বাইডেনের নির্বাহী আদেশগুলো বাতিলে ট্রাম্পের পরিকল্পনার কি হবে, তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্ট সাবেক প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশগুলো বাতিল করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে বাইডেন অটোপেন ব্যবহার করেছেন কি না সে বিষয়টি প্রভাব ফেলবে না। তবে ট্রাম্প বাইডেনের ক্ষমা আদেশগুলো বাতিল করতে পারবেন না। কারণ একবার ক্ষমা মঞ্জুর হয়ে গেলে তা চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। সুতরাং, নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন, তবে ক্ষমা আদেশগুলি বাতিল করার সাংবিধানিক ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই।

এফএস