নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার, একদিন পরই থ্যাংকসগিভিং উদযাপনে মেতে উঠবে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ছুটির মৌসুমে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ, আর বছরের মোট লাভের এক-তৃতীয়াংশ এ ক'দিনেই উঠে আসে বলে খুচরা বিক্রেতাদের জন্যও দিনটি বিশেষ।
থ্যাংকসগিভিংয়ের পরদিন ব্ল্যাক ফ্রাইডে- বিশাল মূল্যছাড়ের উৎসব। আভাস মিলছে, এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেতার সংখ্যা ছাড়াতে পারে অতীতের সব রেকর্ড। এরপর দু'দিন সাপ্তাহিক আর সবশেষে সাইবার মানডে। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন- এনআরএফ বলছে, চলতি বছর এই পাঁচদিনে শুধু মার্কিন ভূখণ্ডে ধুমসে কেনাকাটায় যোগ দেবে ১৮ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ; যে সংখ্যাটি গেলো বছর ছিল ১৮ কোটি ৩৪ লাখ।
এক অধিবাসী জানান, ওয়ালমার্টে জিনিসপত্রের দাম পছন্দ আমার। কারণ এটা ব্যয়বহুল নয়। অন্যান্য জায়গা আমার জন্য খুব ব্যয়বহুল। আমি টার্কি কিনবো, জ্যাম, চাল, বিনস সবকিছু কিনবো হিস্প্যানিক। থ্যাংকসগিভিংসহ পুরো ছুটির সময়ের এই মূল্যহ্রাস দারুণ, অভাবনীয় রকমের চমৎকার।
বছরের শেষ দুই মাস খুচরা বিক্রেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ সময়েই বিক্রির প্রবৃদ্ধি কমবে বলে শঙ্কিত মার্কিন ব্যবসায়ীরা। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অনলাইন ও অফলাইনে প্রথমবারের মতো বিক্রি এক লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, বলছে এনআরএফ। বছরের বাকি সময়ের তুলনায় এ অঙ্ক প্রায় চার শতাংশ বেশি হলেও, গেলো বছর এ হার ছিল প্রায় পাঁচ শতাংশ।
এ অবস্থায় থ্যাংকসগিভিং থেকে সাইবার মানডে সামনে রেখে বিক্রি বাড়াতে আগাম প্রচারণা শুরু হয়েছে খুচরা পর্যায়ে। খুচরা পণ্য বিক্রিতে শুধু ব্ল্যাক ফ্রাইডে'র জন্য আলাদা পোর্টাল চালু করেছে মেসি'জ ডিপার্টমেন্ট স্টোর চেইন; বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস অ্যামাজন ২০ নভেম্বর থেকে আর বহুজাতিক চেইন ওয়ালমার্ট ১৪ নভেম্বর থেকে চালাচ্ছে আগ্রাসী মূল্যছাড়ের প্রচার।
ওয়ালমার্টের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক মেরিয়েল মেসিয়ার বলেন, ‘আশা করছি যে এই ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনেক পণ্য আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে। ইলেকট্রনিক্স, খেলনা, ডাইসন-অ্যাপলের মতো ব্র্যান্ড, খেলনায় বার্বির মতো জনপ্রিয় পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি আমরা। মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলনাগুলো কিনতে প্রচুর বিকল্প পাবেন আমাদের ক্রেতারা।’0
ক্রেতারাও পছন্দের পণ্য কিনতে শুরু করেছেন হিসাবনিকাশ। ব্যাংক অব আমেরিকার নভেম্বরের তথ্য বলছে, ক্রেতাদের ব্যাংক হিসাবগুলোতে অর্থ কম নেই। করোনাভাইরাস মহামারির আগে, ২০১৯ সালের তুলনায় সব শ্রেণির মানুষেরই সঞ্চয় বর্তমানে বেশি। কিন্তু তাও খরচে লাগাম টানতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
নানান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি শুল্ক যুদ্ধের শিকার খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়াচ্ছে পণ্যের দাম। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কমছে দরদামের সুযোগ। অবশ্য এ সমস্যা থেকেও ক্রেতাদের মুক্তি দিতে থাকছে আগে কিনে পরে দাম পরিশোধের সুযোগ।
অ্যাডোবের কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স অপ্টিমাইজেশনের গ্লোবাল ইভাঞ্জেলিস্ট এরিক ম্যাটিসঅফ বলেন, ‘এখন পণ্যে কিনে পরে পরিশোধ করার সুযোগের ব্যবহার বাড়তে থাকার ওপর চলতি বছর প্রবৃদ্ধির বড় অংশ নির্ভর করছে বলে দেখতে পাচ্ছি আমরা। আশা করছি যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২শ' কোটি ডলারের পণ্য কিনবেন ক্রেতারা। ভোক্তারা কেনাকাটা করতে এবং মূল্যছাড়ের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে ভীষণ আগ্রহী।’
সাড়ে আট হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এক জরিপে উঠে এসেছে, থ্যাঙ্কসগিভিং সপ্তাহের মূল্যহ্রাসের জন্য অপেক্ষা করছেন দুই-তৃতীয়াংশ গ্রাহক। উপহার, সাজসজ্জা, চকোলেটসহ বাহারি খাদ্যপণ্যের মতো মৌসুমি জিনিসপত্রে চলতি বছর মাথাপিছু গড় খরচ হতে পারে ৮৯০ ডলার, যা গেল বছর ছিল ৯শ' ডলারের বেশি।





