ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানোয় সমালোচনার মুখে নয়াদিল্লি

নেতানিয়াহু ও মোদি | ছবি: সংগৃহীত
0

অতীতে ফিলিস্তিনের স্বার্থে আঘাত লাগলেই মিত্র হিসেবে পাশে দাঁড়ানো ভারত এখন ইসরাইলে ঘনিষ্ঠ মিত্র। নেতানিয়াহু প্রশাসনের সঙ্গে মোদি প্রশাসনের সাম্প্রতিক বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি এর বড় প্রমাণ। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব চলমান থাকা অবস্থার মধ্যে তেল আবিবের সাথে বন্ধুত্ব বাড়ানোয় সমালোচনার মুখোমুখি নয়াদিল্লি।

নয়াদিল্লিতে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসের আরাফাতের ঐতিহাসিক এই সাক্ষাত ১৯৮০ সালের। ১৯৪৭ সাল থেকে তৎকালীন সময় যে কোনো সংকটে সবসময় পাশে থাকায় ফিলিস্তিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলো ভারত। ইন্দিরা গান্ধীকে বড় বোন বলেও সম্বোধন করতেন তদানীন্তন প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন অথরিটির নেতা ইয়াসের আরাফাত।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৮ সালে ফিলিস্তিনের মাটিতে পা রেখে ইতিহাস গড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বরণ করে নিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ৩০ বছর পর ভারতের সরকার প্রধান হিসেবে সেই সফরেও সব সময় পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন মোদি।

কিন্তু বাস্তবতা বরই নির্মম! যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় চলমান ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদারদের হত্যা, নির্যাতনের পাল্লা ভারী হয়ে ওঠলেও কেবল উদ্বেগে সীমাবদ্ধ ভারত। অন্যদিকে দিন দিন নেতানিয়াহু প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরালো করছে মোদি প্রশাসন।

আরও পড়ুন:

৮ সেপ্টেম্বর হওয়া দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি'র দুই মাস না যেতেই ৪ নভেম্বর তেল আবিবে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত-ইসরাইল। একইদিন নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার। পাশে থাকায় নয়াদিল্লির প্রশংসাও করেছে তেল আবিব।

এসব বৈঠক ও চুক্তির মধ্য দিয়ে উভয়েই নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও সামরিক সহযোগিতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় একদিকে ইসরাইল সৃষ্ট ফিলিস্তিনের পরিস্থিতিতে নিয়ে উদ্বেগ জানানো ভারত সেই ইসরাইলের সাথেই বন্ধুত্বের পাল্লা ভারী করায় হচ্ছে সমালোচনার মুখোমুখি তাদের বিদেশ নীতি।

শুধু তাই নয়; এর আগে ২০২৪ সালে আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনেও ফিলিস্তিনের পক্ষে ভারতের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো। বিশেষ প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছিলে- গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের মধ্যে গোপনে ইসরাইলকে মারণাস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত। প্রমাণ হিসেবে ইসরাইলি ভাণ্ডারে ভারতীয় অস্ত্রের একটি ভিডিও তুলে ধরেছিলো গণমাধ্যমটি। এছাড়া ২০২৩ এর অক্টোবরে গাজায় শুরু ইসরাইলি হামলা বন্ধ প্রচেষ্টায় তখন জাতিসংঘে আনা চারটি বড় প্রস্তাবেও ভোটদানে বিরত ছিলো ভারত।

এ অবস্থায় বড় প্রশ্ন হলো যেই ভারত একসময় ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলো; সেই দেশটি এখন ঠিক কী কারণে ফিলিস্তিনের চির শত্রু ইসরাইলকে কাছে টানছে? এমনকি ৭ বছর আগের ঐতিহাসিক সফরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মোদির দেয়া আশ্বাসও প্রশ্নের মুখোমুখি। ইতিহাস বলছে, ১৯৯০র দশকের গোড়ার দিকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্য দিয়ে ইসরাইল ঘেঁষা হতে থাকে ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তিধর দেশ পাকিস্তানের চেয়েও প্রতিরক্ষা শক্তিতে এগিয়ে থাকার অন্যতম কৌশল ছাড়াও; নিজেদের অর্থনীতি শক্তিশালী করার স্বার্থ হাসিলে ভারত এই পথে এগুচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ইএ