প্রতিনিয়ত বন-জঙ্গল উজার করে নগরায়ন, শিল্প কারখানা, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে বায়ুদূষণের কবলে বিশ্ব। যার ফলে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। খরা, দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও মেঘ ভাঙা বর্ষণের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আবার অতিরিক্ত গরম ও এর প্রভাবে নানা রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে।
জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার তথ্য বলছে, অতিরিক্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে একজন মানুষ মারা যাচ্ছেন। সারা বছরের হিসেবে তীব্র গরমে প্রাণ হারাচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ।
গবষেকরা বলছেন, ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে মৃত্যুর হার ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ।
সবশেষ চার বছরের জরিপের তথ্যমতে, একজন ব্যক্তিকে বছরে গড়ে ১৯ দিন তীব্র তাপমাত্রা সংস্পর্শে আসতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি প্রাণঘাতী পর্যায়ে যায়। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবীদের রেকর্ড ৬৩৯ বিলিয়ন কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, যা স্বল্পোন্নত দেশের জাতীয় জিডিপির ৬% ক্ষতি করেছে।
আরও পড়ুন:
পরিবেশবিদরা বলছেন, গেল বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী ইউরোপীয় সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, ২০২৪ সালের তাপমাত্রা, ১৮৫০-১৯০০ সালের প্রাকশিল্প যুগের তুলনায় ১.৬ ডিগ্রি বেশি ছিলো।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থাও। যদিও ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রীর নিচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো।
২০১০ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রীর নিচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে ১শ টিরও বেশি দেশ তাতে আপত্তি জানায়। পরে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রীর নিচে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আর বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, গত দশ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে উষ্ণতম বছরের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে এবং বনের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এতে পশ্চিম আমেরিকা এবং কানাডা থেকে দক্ষিণ ইউরোপ এবং রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্য পর্যন্ত বৃহত্তর এবং উত্তপ্ত দাবানলের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রতিবছর মে বা জুন মাসে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২৫ সালে, মে মাসে প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ১.৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। সুতরাং এটি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমার খুব কাছাকাছি, কিন্তু এখনও তা হয়নি।
১৯৫০ সালের পর ২০২৪ সালে ব্রাজিলের আমাজন ফরেস্ট সবচেয়ে খারাপ এবং ব্যাপক খরার কবলে পড়ে। গেল বছর নদীর পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় রেইনফরেস্টে একাধিক দাবানলের ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে আমাজনের ১০ শতাংশ থেকে ৪৭ শতাংশ অংশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপ এবং খরার পাশাপাশি অন্যান্য হুমকির সম্মুখীন হবে।





