রক্তাক্ত ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিপে তোলা হচ্ছে একের পর এক মরদেহ। দেখে মনে হবে কিছুক্ষণ আগে কোনো সন্ত্রাসী হামলা বা দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে বাস্তব সত্য হচ্ছে মঙ্গলবার, স্থানীয় সময় ভোরে ব্রাজিলের ফাভেলা পেনইয়া ও আলেমাও অঞ্চলে দুর্ধর্ষ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে অপারেশন কন্টেইনমেন্ট নামে একটি অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।
গার্ডিয়ান জানায়, মাদকবিরোধী এই অভিযানে অংশ নেয় পুলিশ বিভাগের প্রায় ২,৫০০ সদস্য। অভিযান শুরুর পর রেড কমান্ড নামে মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর প্রথমে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পুলিশ বিভাগের। কয়েক ঘণ্টা ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে দু'পক্ষের মধ্যে । এতে মাদক পাচারকারী ছাড়াও, প্রাণ হারান কয়েকজন পুলিশ। আহতও হয়েছে অনেকে।
এদিকে, ২০১০ সালের পর এটিকে সবচেয়ে বড় মাদক বিরোধী অভিযান বলে জানিয়েছেন রিওডির ডানপন্থী গভর্নর।
আরও পড়ুন:
রিও ডি জেনিরোর গভর্নর ক্লাউডিও ক্যাস্ত্রো বলেন, আমরা ফেডারেল বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সাহায্য ছাড়াই, ইতিহাসের বৃহত্তম অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে আমরা ৫৬ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার, ১৮ জনকে নিষ্ক্রিয় এবং ৩১টি রাইফেল জব্দ করেছি। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ মাদকদ্রব্যও আমরা উদ্ধার করেছি।
১৯৮০ এর দশকের পর থেকে ফাভেলা এলাকায় আস্ফালন ঘটে মাদক কারবারিদের। রিও ডি জেনিরোর নিরাপত্তা সচিব ভিক্টর সান্তোস জানান, রিওর বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ করে রেড কমান্ড গ্যাংয়ের সদস্যরা। এছাড়া আমাজনের অনেক অঞ্চলেও উপস্থিতি রয়েছে গোষ্ঠীটির। আদেরকে ধরতেই এই অভিযান বলে এক টেলিভিশন বার্তায় জানান সান্তোস।
যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় কোকেন সেবনকারী দেশের তালিকায় ব্রাজিল। ২০২৪ সালে দেশটিতে ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি কোকেন পাচারের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। জব্দ করা হয় ১ লাখ ৩০ হাজার কিলোগ্রাম মাদক। এছাড়া দেশটিতে মাদক কারবারিদের ওপর পুলিশের অভিযান নতুন নয়। আল-জাজিরা জানায়, ২০২৪ সালে মাদকবিরোধী অভিযানে দেশটিতে অন্তত ৭০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে এবারের অভিযানে প্রাণহানির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে অনেক মানবাধিকার সংগঠন ও ব্রাজিলের বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো। এটিকে রাষ্ট্র পরিচালিত গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে ব্রাজিলের বামপন্থী ওয়ার্কাস পার্টি। এতো প্রাণহানিতে ভীত ব্রাজিলের সাধারণ মানুষও।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এটা ভীতিকর। আমি রিওতেই জন্ম নিয়েছি ও এখানেই বেড়ে উঠেছি। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন আগে কখনোই হইনি। এতো বড় অভিযানের পর আমি সকালে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যানবাহন পাব কিনা তা জানতে বার বার সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করছি। রাস্তায় কোনো বাস নেই। একটি ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
আগামী সপ্তাহে রিও ডি জেনোরিতে সি ৪০ ওয়ার্ল্ড মেয়রস সামিট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, আগামী ১০ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত একই শহরে বিশ্বনেতারা অংশ নেবেন শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলন কপ থার্টিতে। এর আগেও ২০১৬ সালের অলিম্পিক, ২০২৪ সালের জি-টুয়েন্টি ও ব্রিকসের মতো বড় বড় সম্মেলনের আগে রিও ডি জেনিরোতে বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী





