স্বর্ণের দাম হুল ফোটাচ্ছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহমেদাবাদে স্বর্ণের ক্ষুদ্র কারিগরিদের উপার্জনে। সামর্থ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় দোকানে পা পড়ছে না ক্রেতাদের, ব্যস্ততা কমেছে কারখানাগুলোতে।
চার হাজার ডলারের মাইলফলক স্পর্শের এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে চার হাজার ২ শ’ ডলারের কাছাকাছি। ইতিহাসের রেকর্ড দামের ফলে বহু মধ্যবিত্ত ভারতীয় নাগালের বাইরে চলে গেছে মূল্যবান সোনালী ধাতু।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, স্বর্ণের দাম যেভাবে বেড়ে গেছে, তাতে বিক্রি নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে। কেউ অলঙ্কার কিনছে না। ক্রেতার আসছেও খুব কম। যাদের খুব প্রয়োজন, তারাই শুধু স্বর্ণ কিনছে, কিন্তু খুব কম পরিমাণে।
বছরের সাড়ে নয় মাসে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ; যে হার এক বছর আগে একই সময়ে ছিল ২৭ শতাংশ। ভারতে ২৪ ক্যারেটের প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের দাম এক লাখ ২৮ হাজার রুপি ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে তো গেছেই, হুমকির মুখে কারিগরদের জীবিকা।
আরও পড়ুন:
ছোট দোকানগুলোকে স্বর্ণালঙ্কারের অর্ডার ভীষণভাবে কমে গেছে। বড় দোকানগুলোতে যেহেতু বিক্রি বেশি, তারা অন্যান্য কারখানা থেকে পাইকারি দামে স্বর্ণ কিনছে। তাই ক্ষুদ্র কারিগরদের পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ।
একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ বছরের বেশি। এ বয়সে নতুন করে কোনোকিছুতে দক্ষ হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি পড়ালেখাও করিনি কখনো, তাই যা করি, সেটাই চালিয়ে যেতে চাই। কোটি কোটি স্বর্ণকার আছে আমার মতো। আমি সরকারকে অনুরোধ করছি আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা যেন তারা নেয়।’
সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত ভারতে পারিবারিকভাবেই স্বর্ণের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু উৎসব-পার্বণে বা বিয়ের গহনা হিসেবেই নয়, বিশ্বস্ত বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবেও সামর্থ্য অনুযায়ী স্বর্ণ কিনে থাকেন সাধারণ ভারতীয়রা। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় স্বর্ণের দাম এবং ডলারের দাম ওঠানামার মতো বৈশ্বিক কারণগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণের দাম নির্ধারিত হয়।
ভারতের আহমেদাবাদ গোল্ড জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জিগার সোনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের পরিস্থিতি যেমন অস্থির হয়ে উঠছে, সেগুলোই স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণ। আমেরিকায় শাটডাউন চলছে; রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো ইউরোপীয় দেশ, হামাস-ইসরাইল, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যেও যুদ্ধের পরিবেশ। ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো আর সাধারণ মানুষের মধ্যেও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে স্বর্ণ-রূপা দু’টোই কেনার হার বেড়েছে। এ সব কারণে চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সর্বোচ্চ স্বর্ণ কিনেছে।’
২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে ডলার আর অপরিশোধিত তেলের দরপতন এবং বৈশ্বিক পুঁজি বাজার আর বিটকয়েনের অগ্রগতিকে ছাপিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে স্বর্ণ। বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানো, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বৃদ্ধি, স্বর্ণকেন্দ্রিক বিনিময় লেনদেন তহবিল বা ইটিএফের চাহিদা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে লাগামহীন স্বর্ণের বাজার।





