মার্কিন দূতের গাজায় সফরের দিনেও ১০৬ ফিলিস্তিনি হত্যা

গাজায় ইসরাইলি হামলার ধ্বংসাবশেষ
গাজায় ইসরাইলি হামলার ধ্বংসাবশেষ | ছবি: সংগৃহীত
0

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সফরের দিন শুক্রবার (১ আগস্ট) ১০৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলী বাহিনী। এর মধ্যে ১২জনই ছিলেন অনাহারে ধুকতে থাকা ত্রাণপ্রার্থী। তবে উইটকফের সফরে খাদ্য সংকট দূর করতে দুর্দান্ত অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এদিকে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার হাজার হাজার মানুষ।

বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যখন গাজার জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্র পরিদর্শন করছিলেন, তখনও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে শুক্রবার একদিনেই আরও শতাধিক গাজাবাসীর প্রাণ গেছে। এদিন নিহতের তালিকায় ছিল ত্রাণবাহী ট্রাকের জন্য অপেক্ষায় থাকা ১২ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিও।

অনাহার ও অপুষ্টিতে শুক্রবার আরও দুই শিশু এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক মারা গেছেন। এতে অনাহারে গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ৯০ জনের বেশি শিশু। আর পেটে ক্ষুধা নিয়ে বিতর্কিত জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রের খাবার আনতে গিয়ে ইসরাইলি গুলিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে শিশুসহ এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির। এ অবস্থায় অকল্পনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে প্রিয়জন হারা ও অনাহার-অপুষ্টিতে ধুকতে থাকা শিশুরা।

আরও পড়ুন:

ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ এক শিশু বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে নিয়ে কিছু জিনিসপত্র আনতে গিয়েছিলেন। আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ একজন লোক এসে আমাকে বলল, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘যেসব জায়গায় আমরা খাবার এবং সাহায্য পাই সেগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা কেবল মৌলিক অধিকার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য লড়াই করছি।’

স্টিভ উইটকফের সফরের পরও ইসরাইল ক্ষুধাকে মৃত্যুফাঁদে পরিণত করার কৌশলেই এগুচ্ছে। তবুও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, ফিলিস্তিনিদের খাবার সংকট দূর করতে বড় অগ্রগতির বিষয়ে বৈঠক করেছেন তার বিশেষ দূত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি স্টিভ উইটকফের সাথে কথা বলেছি। অনেকের সাথে তার দুর্দান্ত বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ফিলিস্তিনিদের খাবারের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আরও কিছু কথোপকথনও ছিল যা আমি পরে জানাবো।’

তীব্র খাবার সংকটে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শুক্রবার বিমানের মাধ্যমে খাবার ফেলেছে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, মিসর, জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় বিমান থেকে ফেলা এসব খাবার সহায়তা খুবই সামান্য। সবচেয়ে বড় বিষয়, একটি ট্রাকে করে গাজায় সহায়তা পাঠাতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, বিমান দিয়ে তার চেয়েও অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হয়। যা দিয়ে আরও অনেক খাবার কেনা যেতো।

আরও পড়ুন:

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আর ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। রান্নার পাত্র বাজিয়ে এবং ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। অভিযোগ করেন, গাজায় গণহত্যা চলাতে মদত দিচ্ছে পশ্চিমারা।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘বুঝতে পারছি না কেন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এই ধরণের ব্যবস্থাকে সমর্থন করছে এবং গণহত্যা দেখে যাচ্ছে। আবার এসব অস্বীকার করারও চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার জন্য সবাই এখানে এসেছেন। যা দেখতে সত্যিই ভালো লাগছে। আমার মনে হয় এটা কিছুটা হলেও গাজাবাসীর জন্য ভালো হবে।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগ্রাসন শুরুর পর ৬৬২ দিনে ৬০ হাজার ৩শ’র বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার ৩৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ৩৩টিতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া জ্বালানি ও পানির সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতেই মূলত মানবিক সংকট পরিস্থিতি তীব্র হচ্ছে।

ইএ