আরব লিগের জরুরি সম্মেলন আজ

বিদেশে এখন
0

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে মিশরে শুরু হচ্ছে আরব লীগের জরুরি বৈঠক। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এই বৈঠকে হামাসকে বাদ দিয়ে গাজা পুনর্গঠন আর অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে আসতে পারে নতুন পরিকল্পনা। এদিকে, তেল আবিবের পরিকল্পনা, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে মুক্তি দিতে হবে সব ইসরাইলি বন্দিকে। হামাসের অভিযোগ, চুক্তি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেছে ইসরাইল।

৬৫ বছর বয়সী হামিদ আল জারু, আল আকসা মার্টিয়ার ব্রিগেডের নেতা ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ৩৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন ইসরাইলি কারাগারে। বন্দি শত শত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিনিও একজন, যাকে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি দেয়া হয়েছে।

২৪ বছর পর ইফতার করছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে। বাড়ির রান্নাঘর আর ইফতারের টেবিল পরিপূর্ণ আল জারুর স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে আল জারুর মতো মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনির এটুকুই সান্ত্বনা, পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন একসঙ্গে।

মুক্তি ফিলিস্তিনিদের একজন বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে এতো বছর পর দেখা হয়েছে, একসঙ্গে খাচ্ছি। এরচেয়ে আনন্দের কিছু নেই। আমার প্রিয় খাবার মাকলুবা খেয়েছি। খুশি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আগে ভয়ে ভয়ে ইফতার করতাম, এখন সেটা করতে হবে না।’

গেল বছর রমজানে হামলা আতঙ্কের মধ্যে ধ্বংসস্তূপের ইফতার আর সেহরি সারতে হয়েছে গাজাবাসীকে। এবার রোজা শুরুর আগে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও মেয়াদ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় আতঙ্কেই রমজানে ইবাদত করছেন ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ।

এরমধ্যে প্রথম দফার চুক্তির মেয়াদ বাড়েনি, কার্যকর হয়নি দ্বিতীয় দফার চুক্তি। গাজায় ত্রাণ সরবরাহরে পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। উপত্যকায় রোজার মধ্যে আকাশ ছুঁয়েছে নিত্যপণ্যের দর।

যদিও ইসরাইল বলছে, দ্বিতীয় ধাপে চুক্তি নয়, প্রথম ধাপের চুক্তি নবায়ন করে অবশিষ্ট সব ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে হামাসের। কিন্তু ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত। শুরু থেকে হামাস বলে আসছে, ইসরাইল চুক্তি ভঙ্গ করছে। ইসরাইলের প্রথম ধাপের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব সন্দেহজনক। ইসরাইলের উগ্রপন্থী সরকার ব্ল্যাকমেইল করছে।

এরমধ্যেই যুদ্ধপরবর্তী গাজা পুনর্গঠনের বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার, ৪ মার্চ) জরুরি সম্মেলনে বসছে আরব দেশগুলোর সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা। মিশরে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শুরু হবে আরব সম্মেলন। এই সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠন নিয়ে পরিকল্পনা দেবে মিশর। থাকবে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টিও। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, দ্রুতই যুদ্ধবিরতি আর বন্দি বিনিময় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কাজ শুরু হবে।

মিশরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, উপত্যকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হামাস পরিচালিত সরকার সরিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য উপত্যকায় অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে। উপত্যকায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা আর পুনর্গঠন করা হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ। তাদের দাবি, গাজার সরকারব্যবস্থায় হামাস থাকলে আন্তর্জাতিক সহায়তা আসবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা নিয়ে বিধ্বংসী পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে মিশর, জর্ডান আর গালফ রাষ্ট্রগুলো।

সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বলছে, ফিলিস্তিন নিয়ে আরব, মুসলিম আর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পরিকল্পনায় হামাসকে একপাশে রাখা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ফিলিস্তিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আরব বা মুসলিম বিশ্ব। ফিলিস্তিনের ইস্যুতে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গাজাবাসী। প্রয়োজন অন্তত ৬০ হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘর। কিন্তু উপত্যকায় পৌঁছেছে মাত্র ১৫ টি। ২ লাখ তাবুর প্রয়োজন হলেও গেছে মাত্র অর্ধেক। এদিকে, গাজার ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে এখনও বেরিয়ে আসছে লাশ। উপত্যকায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৩শ' ৯৭। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার আর মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় চলছে যুদ্ধবিরতি, যার মেয়াদ এখনও বাড়েনি।

ইএ