বিদেশে এখন
0

১৪৪ বছরের বিরল আয়োজন মহাকুম্ভে অংশ নিতে প্রস্তুত চার কোটি পুণ্যার্থী

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েতের আয়োজনে ব্যস্ত ভারত। উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এবারের মহাকুম্ভে যোগ দেবেন দেশি-বিদেশি প্রায় চার কোটি পুণ্যার্থী। ১৪৪ বছরের একমাত্র, বিরল এ মহা আয়োজন ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলা দেখা যাবে সুদূর মহাকাশ থেকেও। গঙ্গা-যমুনা আর সরস্বতী নদীর মিলনস্থলে, প্রতি ১২ বছরে একবার অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলার ১২টি আয়োজনের চক্র সম্পন্ন হচ্ছে এ বছর।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসে পবিত্রতম নদী গঙ্গা, এর উপনদী যমুনা এবং পৌরাণিক সরস্বতী। এই তিন নদীর মিলনস্থলে চলছে পাপমোচন ও আত্মা পরিশুদ্ধির স্নান। হিন্দু ধর্মে চূড়ান্ত উদ্দেশ্য- জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে আত্মার মুক্তিও এ স্নানের অন্যতম লক্ষ্য।

ভক্তদের একজন বলেন, ‘গঙ্গায় স্নানের সুযোগ পেয়ে সৌভাগ্যবতী আমি। গঙ্গা দেবী, যমুনা দেবী, সরস্বতী দেবীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে এই শুভক্ষণে এখানে স্নান করার সুযোগ দিয়েছেন, আশীর্বাদ করেছেন।’

ভারতে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ শহরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত- কুম্ভ মেলার প্রথম দিন, আজ (সোমবার, ১৩ জানুয়ারি) তিন নদীর মোহনায় স্নান করবেন ৫০ থেকে ৮০ লাখ মানুষ। ৪৫ দিনের এ আয়োজনের বাকি দিনগুলোতে এ সংখ্যা দুই কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার দিনের আলো ফোটার প্রথম মুহূর্তে নদীতে গভীর ডুব দেবেন সারা দেহে ছাই মাখা 'নাগা সাধু' হিসেবে পরিচিত হিন্দু সন্ন্যাসীরা; যা মেলার দ্বিতীয় দিনের বিশেষত্ব। এছাড়া তপস্যা বা সাধনার অংশ হিসেবে মেলাজুড়ে দেখা যাবে তাদের নানা কসরত।

হিন্দু সন্ন্যাসীদের একজন বলেন, ‘আমি বাবা মহাকাল। একটা তলোয়ারের ধারের ওপর যদি হাঁটতে না পারি, তাহলে আমি কীসের তপস্বী? তাই আমি তলোয়ারের ধারালো অংশের ওপর হাঁটি। টানা দাঁড়িয়ে থাকা আমার জন্য অনেক কঠিন। মাঝে মাঝেই পা জ্বলে, পা ফুলে যায়, কখনও কখনও ব্যথা করে। কিন্তু আমি সহ্য করি। সাধনা পূর্ণ করি। ২৪ ঘণ্টাই দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমি আমার প্রতিদিনের সব কাজ করি।’

প্রতি ১২ বছরে একবার অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলার ছয় সপ্তাহব্যাপী মহা আয়োজনে এ বছর যোগ দেবেন লক্ষাধিক হিন্দু সন্ন্যাসীসহ দেশ বিদেশের চার কোটির বেশি মানুষ। এত বড় সমাবেশ, যে সুদূর মহাকাশ থেকেও দেখা সম্ভব আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলা! শুধু হিন্দু ধর্মের অনুসারীদেরই নয়, সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন এটি।

অনুসারীদের একজন বলেন, ‘খুবই দারুণ লাগছে সব কারণ এ ধরনের কাণ্ড আমি জীবনে দেখিনি। বিষয়টা বেশ অভিনব আমাদের কাছে। তবে এগুলো আমাদের পূর্বপুরুষের ধারা। সব তরুণদের বলতে চাই যেন তারা এখানে আসেন।’

দেড় মাস ধরে উৎসবে আসতে থাকা অতিথিদের সর্বোচ্চ আতিথেয়তা নিশ্চিতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে প্রশাসন। পুণ্যার্থী আর পর্যটকদের জায়গা দিতে নদীর তীরে চার হাজার হেক্টরের বেশি এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে তাঁবু। মেলা শুরু হয়ে গেলেও সাধুসন্ত ও তীর্থযাত্রীদের অনেক তাঁবুতে এখনও হয়নি পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। বসানো বাকি কয়েক হাজার অস্থায়ী টয়লেট। পানির সংযোগ না থাকায় অনেক অস্থায়ী টয়লেট ব্যবহারযোগ্য নয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছর বৃষ্টির পানি কমতে দেরি হওয়ায় কুম্ভ মেলার নির্মাণকাজে মেলেনি পর্যাপ্ত সময়।

২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাওয়া কুম্ভ মেলা জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। কুম্ভ মেলার শেকড় লুকিয়ে আছে হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত অমৃত সুধার কলসি বা পাত্র, তথা কুম্ভ নিয়ে লড়াইয়ের গল্পে। অমরত্ব লাভের উদ্দেশে অমৃতকুম্ভ নিয়ে দুধের সাগরে এ যুদ্ধ, তথা সমুদ্রমন্থনে লিপ্ত হয় দেবতা আর অসুররা। অসুর ও দেবতাদের লড়াইয়ের সময় দেবরাজ ইন্দ্রের ছেলে কুম্ভ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ১২ দিনের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের সময় অমৃতের ফোঁটা যেখানে পরে, সেখানেই বসে কুম্ভ মেলার আসর।

পৌরাণিক এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পূর্ণ, অর্ধ, কুম্ভ ও মহা কুম্ভ- এই চার ধরনের কুম্ভ মেলা হয় ভারতে। হরিদ্বার, উজ্জয়িনী, নাসিক ও প্রয়াগরাজে চক্রাকারে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি তিন বছর পর পর। হরিদ্বার ও প্রয়াগরাজে প্রতি ছয় বছরে একবার অর্ধ কুম্ভ এবং হরিদ্বার, উজ্জয়িনী, নাসিক ও প্রয়াগরাজ- পবিত্র চার স্থানেই প্রতি ১২ বছরে একবার বসে পূর্ণ কুম্ভ মেলা। আর পূর্ণ কুম্ভ মেলার ১২টি চক্র সম্পূর্ণের বছরে উদযাপিত হয় মহা কুম্ভ, যা ১৪৪ বছরে ঘটে একবার। চলতি বছর এই মহা কুম্ভের বিরল আয়োজনে যোগ দিচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরাও।

মহাকুম্ভে যোগ দিতে ভারতে পৌঁছেছেন মানব হিতৈষীখ্যাত অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জবসসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক জনদরদি ব্যক্তিত্ব।

ইএ