ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ওপর এবার যৌথভাবে চড়াও হয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। গেল শনিবার রাতে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে প্রোজেক্টাইল মিসাইল হামলার জবাবে এবার ইয়েমেনের সানায় হুথি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ।
যদিও তাদের দাবি, রেড সি-তে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে বারবার হামলা করে আসছিল ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এর আগে, গেল বৃহস্পতিবার হুথি নিয়ন্ত্রিত বন্দর ও জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরাইল। জবাবে ১৯ ও ২১ ডিসেম্বর দুই দফায় তেল আবিবে প্রোজেক্টাইল হামলা চালায় ইয়েমেনি সশস্ত্র সংগঠনটি।
গেল শনিবার ভোররাতে হুথিদের ছোড়া এই প্রোজেক্টাইল মিসাইল প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয় ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এখনও পর্যন্ত এ হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি তেল আবিব। এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর সক্ষমতা ও যুদ্ধনীতি নিয়ে জনরোষ বাড়ছে প্রতিনিয়তই।
শনিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর পতনের দাবিতে আবারও উত্তাল রাজধানী তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ার। ইসরাইলি জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে নেতানিয়াহু প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যদের।
এক অধিবাসী বলেন, ‘আমাদের জন্য প্রতিটি রাতই সমান। তারা সবসময় আলোচনাই করে যাচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো সাফল্য নেই। যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আর আশাবাদী হতে পারছি না।’
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘প্রতিদিনই নতুন নতুন অগ্রগতির খবর পাই। যদিও এখন আর এসব বিশ্বাস করি না।’
এদিকে, অধিকৃত পশ্চিমতীর ও গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নুসেইরাত ও দেইর আল-বালাহ শহরে অভিযান জোরদার করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ।
দক্ষিণ গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি এর আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বাধ্য করছে ইসরাইলি সেনারা। অভিযান চলছে জাবালিয়ার আল আওদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও।
এমন বাস্তবতায়ও গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে মিশরে আলোচনায় বসেছে হামাস, ইসলামিক জিহাদসহ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিদল। ইসরাইল নতুন কোনো শর্ত না দিলে সমঝোতার সম্ভাবনাও দেখছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বড়দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া সব ধরনের আয়োজন বাতিল করেছে জেরুজালেমের দক্ষিণে অবস্থিত যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান খ্যাত শহর বেথলেহেমের স্থানীয় প্রশাসন।
ইসরায়েল-অধিকৃত এই পূণ্যভূমির মেয়র বলেছেন, ইসরাইলি আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতার প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বেথলেহেমের মেয়র অ্যান্টন সালমান বলেন, ‘মাতৃভূমি ও জনগণের ওপর যে বর্বর হামলা ও নির্যাতন চলছে তার প্রতিবাদে এ বছর বড়দিনে প্রার্থনা ও ধর্মীয় আচার ছাড়া সবধরনের আয়োজন বাতিল করছি। ফিলিস্তিন ও গাজায় নির্বিচারে যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তার প্রতিবাদে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হল।’
আর ভ্যাটিকান সিটিতে বড়দিন উপলক্ষে দেয়া বার্ষিক ভাষণে গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্যান্সিসও। গেল শুক্রবার ইসরাইলি হামলায় শিশুসহ ২৫ ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পোপ বলেন, যুদ্ধের দোহাই দিয়ে শিশুদের হত্যা করা পাপ। এই নির্মমতার বিরুদ্ধে ক্যাথোলিক খ্রিস্টানদের সোচ্চার হওয়ার দাবিও জানান তিনি।