বিদেশে এখন
0

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হাসান নাসরাল্লাহ

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। তার হাত ধরেই রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইরানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল খুব ঘনিষ্ঠ। ফিলিস্তিনের হামাস এবং ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়ারা নাসরাল্লাহর নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ নেয়। ৩২ বছর ধরে হিজবুল্লাহ বাহিনীকে আগলে রেখেছিলেন তিনি।

১৯৬০ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বুর্জ হামুদ অঞ্চলে জন্ম হয় হিজবুল্লাহ প্রধান শেখ হাসান নাসরাল্লাহ'র। বাবা আবদুল করিম ছিলেন সবজি বিক্রেতা। ৯ ভাইবোনের মধ্যে নাসরাল্লাহ ছিলেন সবার বড়। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দক্ষিণ লেবাননের শিয়া অধ্যুষিত এলাকায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দেশটির প্রভাবশালী আমাল মুভমেন্ট নামে রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হন তিনি।

২২ বছর বয়সে নবীন সদস্য হিসেবে যোগ দেন হিজবুল্লাহ গ্রুপে। এরপর পড়াশোনার উদ্দেশে ইরানে তার সময় কাটে ২ বছর। ১৯৯২ সালে ইসরাইলি বিমান হামলায় তৎকালীন হিজবুল্লাহ প্রধান আব্বাস আল–মুসাবির মৃত্যুর পর সংগঠনটির দায়িত্ব এসে পড়ে নাসরুল্লাহর কাঁধে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর।

এদিকে, ক্ষমতা গ্রহণের পরই হিজবুল্লাহর সামরিক শাখার পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক শাখা তৈরির ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেন হাসান নাসরাল্লাহ। লেবাননের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৮টি আসনে জয় পায় হিজবুল্লাহ। ক্রমেই এই সংগঠনে তার অবস্থান মজবুত হতে থাকে।

২০০০ সালে নাসরাল্লাহর নেতৃত্বে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইসরাইলি বাহিনী। যা মধ্যপ্রাচ্যে নাসরাল্লাহকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। এ সময় ইসরাইলি সেনাদের হাতে প্রাণ হারান তার বড় ছেলে হাদি। এর জেরে ইসরাইলকে দমন না করা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ না করার ঘোষণা দেন হিজবুল্লাহ প্রধান।

২০০৮ সালে, হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র রাখার বিষয়ে লেবাননের সংসদে একটি আইন পাশ হয় তার তত্ত্বাবধানে। এছাড়া, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন হাসান নাসরাল্লাহ। যা তাকে প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবিদ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত করে।

একজন শিয়া ধর্মপ্রচারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন নাসরাল্লাহ। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সামরিক ও আর্থিক যোগানদাতা ইরান। বিশ্বের নানা প্রান্তে হাসান নাসরাল্লাহর বহু ভক্ত আছেন। তেমনি তার শত্রুরও অভাব ছিল না।

প্রাণনাশের হুমকিতে লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকতেন তিনি। তবে প্রতি সপ্তাহে দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে ভক্তদের উদ্দেশে ভাষণ দিতেন নাসরাল্লাহ। লেবাননের শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে দেশটিতে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যোদ্ধা এবং ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণের নেতৃত্বে দিয়েছেন নাসরাল্লাহ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইরানের কাছ থেকে বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট সংগ্রহ করেন তিনি। পশ্চিমাদের হুমকি ও চাপ উপেক্ষা করেই টানা ৩২ বছর ধরে হিজবুল্লাহকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন ৬৪ বছর বয়সী এই নেতা। লেবাননের অদ্বিতীয় রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা হয়ে উঠেন হাসান নাসরাল্লাহ।

ইএ