বিদেশে এখন
0

ইসরাইল বাহিনীর হামলায় লেবানন জুড়ে চরম বিশৃঙ্খলা

ইসরাইল বাহিনীর হামলায় এবার পালাচ্ছেন লেবাননের বাসিন্দারা। লেবানন জুড়ে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। হিজবুল্লাহকে ধ্বংস না করে থামাবে না ইসরাইল। চুপ বসে নেই ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীও। দুই পক্ষকেই যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এদিকে ইরান বলছে, লেবাননে হামলা করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে উস্কে দিচ্ছে ইসরাইল। এর কঠিন জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনের পর থেকেই তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। প্রায় এক বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে পাল্টিপাল্টি হামলা। সম্প্রতি যুদ্ধের মূল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে লেবানন। স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে হিজবুল্লাহর ১ হাজার ৩শ'টি স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরাইলের বিমান হামালায় হতাহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের পর লেবাননে একদিনে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা এটি।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে কয়েকশ রকেট হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। জবাবে পাল্টা রকেট ছুড়ে হিজবুল্লাহ। এমন পরিস্থিতিতে গোটা লেবাননে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে কয়েক হাজার মানুষ। ইসরাইলের ভয়াবহ হামলায় লেবাননের দক্ষিণের বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালিয়েছে।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমার পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে দিয়ে আসবো। আমি আবার ফিরবো এখানে। আমাদের বিজয় আসবে।’

আরেকজন বলেন, ‘হামলার শুরুর পর আমরা পরিবারসহ দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। জানি না এখন কী হবে।’

কয়েক দশকের মধ্যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে লেবানন। ইসরাইলি হামলায় বাসিন্দারা এখন গুরুতর সংকটের মধ্যে আছে। বিশাল কৃষি জমিও ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘে এক ভাষণে এ কথা বলেন দেশটির এই সংসদ সদস্য।

লেবানিজ সংসদ সদস্য বাহিয়া আল হারিরি বলেন, ‘লেবাননের জনগণ কূটনৈতিক, মানবিক, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, জীবিকাসহ সব ক্ষেত্রে সংকটের মধ্যে পড়েছে। কৃষিজমি থেকে শুরু করে আবাসিক অঞ্চল সব জায়গা ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বাড়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থার মহাসচিব বলেন, লেবাননও গাজার মতো ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। সংঘাত পরিহার করে কূটনৈতিক সমাধানে জোর দিয়েছেন সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনায় দুই পক্ষকে নিরাপদ করে তুলতে কোনো সামরিক সমাধান নেই। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ঝুঁকিপূর্ণ, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সংঘাতে জড়িত সব পক্ষকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বৃহত্তর যুদ্ধ বাঁধাতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ওপর ইসরাইলের ভয়াবহ হামলার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ইসরাইলকে চরম মূল্য দিতে হবে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজিশকিয়ান বলেন, ‘ইরান সবসময় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবসময় এগিয়ে এসেছে ইরান এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তেহরান।’

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেবানন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ দুই পক্ষকেই শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ইসরাইল বলছে, হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। আর হিজবুল্লাহর বক্তব্য, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে।

ইএ