২০২১ সালে বিশ্ব মিথেন অঙ্গীকারে স্পষ্ট বলা হয়, চলতি দশকের শেষ নাগাদ পরিবেশ বিপর্যয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখা মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে যে উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। এতে স্বাক্ষর করেন বিশ্বের দেড়শ দেশ। কিন্তু ফলাফল শূন্য। গবেষণা বলছে, কার্বন ডাই অক্সাইডের পর জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ অবদান রাখা গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমার পরিবর্তে উলটো বেড়েছে।
গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের প্রতিবেদন বলছে, দুই দশকে ২০ শতাংশ বেড়েছে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ। পৃথিবীর ইতিহাসে বিগত ৫ বছরে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ।
এরমধ্যে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা রেখেছে কয়লা খনি, জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলন, গরুর খামার ও খাদ্যের আবর্জনা। ২০২০ সালে ৪ কোটি টন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়েছে। যা ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ সবচেয়ে বেড়েছে চীন আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। গবেষণা বলছে, শিল্প বিপ্লবের পর বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখার সব পথ ব্যর্থ হচ্ছে মিথেন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায়।
হচ্ছেও তাই। প্রতিবছর রেকর্ড ভাঙছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। কোপেরনিকাস ক্লাইমেট সার্ভিসের গবেষণা বলছে, চলতি বছর পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম জুন আর আগস্টের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ববাসী।
আগস্টে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেশি ছিল চলতি বছরের আগস্টের তাপমাত্রা।
শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের পর টানা দ্বিতীয় বছর পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম সালের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ২০২৪। কার্বন নিঃসরণ কমাতে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় খরা, পানিশূন্যতা, ফসল চাষে ব্যর্থতা, খাদ্য সংকটের মতো পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে।
কেবল বিশেষ কোন অঞ্চলে নয়, উষ্ণায়ন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবীতে। ইউরোপে ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে উষ্ণতা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গড় তাপমাত্রা ভয়াবহ বেড়েছে অ্যান্টার্কটিকা, টেক্সাস, মেক্সিকো, কানাডা, উত্তর পূর্ব আফ্রিকা, ইরাক, চীন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায়। তুলনামূলক কম উষ্ণ হয়েছে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল, আলাস্কা, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকা।
শুধু বায়ুমণ্ডল কিংবা ভূপৃষ্ঠ নয়, তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠেও। আগস্টে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা প্রায় ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে দ্বিতীয়বার রেকর্ড ভেঙেছে। সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়ায় আরও ঘনীভূত হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও। বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন, সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।