গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন শুরুর পর এই নিয়ে দশম বারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। প্রতিবারই যুদ্ধবিরতি কার্যকর কিংবা বন্দি বিনিময়ে কূটনৈতিক তৎপরতা দেখালেও কোন পক্ষকেই রাজি করাতে পারেননি তিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক কোন সিদ্ধান্ত না নিয়েই কাতার থেকে ফেরত এসেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসরাইল আলোচনায় অংশ নিলেও অংশ নেয়নি হামাস। যদিও তার দাবি, কিছুদিনের মধ্যেই দুইপক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে সক্ষম হবে মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার আর মিশর।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘হামাস আর ইসরাইলকে এক টেবিলে আনতে প্রয়োজনীয় সবকিছু কিছুদিনের মধ্যে করবো । যুদ্ধবিরতি আর বন্দি বিনিময় বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটা দিন গুরুত্বপূর্ণ। গাজার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদী সেনা উপস্থিতি কখনোই সমর্থন করে না। আইডিএফ গাজা ছাড়তে সম্মত হয়েছে, কিন্তু কয়েকটি স্থানে সেনাসদস্য উপস্থিত থাকবে ।’
ইসরাইল বলছে, গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে তারা সম্মত হলেও গাজা-মিশর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর আর নেতজামির করিডোর থেকে কোনভাবেই সেনা প্রত্যাহার করবে না আইডিএফ। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, দক্ষিণ আর মধ্যগাজার এই অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তার খাতিরে সেনা মোতায়েন বলবৎ থাকবে। কারণ এই ফিলাডেলফি করিডোর দিয়ে বছরের পর বছর ধরে হামাস সমরাস্ত্র অবৈধভাবে গাজায় নিয়ে আসছে। আর নেতজারিম করিডোরে সেনা মোতায়েন করে গাজার উত্তরকে হামাসমুক্ত রাখবে আইডিএফ। পাশাপাশি মুক্ত করা হবে হামাসের হাতে বন্দি সব ইসরাইলি নাগরিককে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, দেশের বন্দিদের মুক্ত করে আনবোই । যারা জীবিত তাদেরও, যারা মৃত তাদেরও । আমরা কাজ করছি। ৬ জন বন্দিকে উদ্ধার করেছি, কিন্তু তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। হামাস তাদের মেরে ফেলেছে। এখনও হামাসের কাছে ১০৯ জন বন্দি আছে। আমরা হার মানবো না।’
চলতি সপ্তাহেও যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলমান থাকবে বলে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র। এই আলোচনায় হামাস সরাসরি অংশ না নিলেও তারা বলছে, পুরো প্রস্তাবই ইসরাইলের চাহিদা অনুযায়ী দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ভুল পথে নিচ্ছে তেল আবিব। এই পরিকল্পনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবনা থেকে ভিন্ন। যে পরিকল্পনায় ছিলো ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলি কিছু বন্দিদের মুক্তি, কারাগারে থাকা কিছু ফিলিস্তিনির মুক্তি, এরপর সেনা প্রত্যাহার ও উত্তরে ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফেরার প্রস্তাবনা। তবে, হামাসের দাবি অনুযায়ী পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি ইসরাইল পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেছে বলেও অভিযোগ গোষ্ঠীটির।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরাইলি সেনা অভিযানে আরও অর্ধ শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। জাবালিয়া, দেইর আল বালাহ, রাফাহ আর খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরেও একযোগে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ। এরমধ্যেই সীমান্ত এলাকায়ও বাড়ছে উত্তেজনা। হিজবুল্লাহ'র অস্ত্রাগারে হামলা চালানোর দাবি করেছে আইডিএফ। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এমন উত্তেজনার মধ্যেই আরও একবার অনিশ্চয়তায় মুখে পড়লো গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যু।