পরিবেশ ও জলবায়ু
বিদেশে এখন
0

প্রতি মাসেই রেকর্ড ভাঙছে তাপমাত্রার পারদ!

২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে প্রতি মাসেই রেকর্ড ভাঙছে তাপমাত্রার পারদ। উষ্ণ আবহাওয়ার প্রভাবে দেশে দেশে বনাঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ দাবানল। এতে পরিবেশে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, অচিরেই বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমার কোন লক্ষণ নেই বলেও জানান তারা।

প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার চরমভাবাপন্ন অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার, যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড। ফলে, ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছে বিশ্ব।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই এই ছয় মাসে তাপমাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়াসহ প্রায় সব মহাদেশেই বেড়েছে গড় তাপমাত্রার হার। আর্কটিক থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ।

এল নিনোর প্রভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এছাড়া, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, বন উজাড়সহ নানা কারণে ক্রমাগত উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। ২০২৩ সালে মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে কেবল ইউরোপেই মারা গেছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যেও প্রাণহানি ঘটেছে হাজারের ওপর।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানায়, চলতি বছরে অন্তত ১০টি দেশে তাপমাত্রা ছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। ইআরএ-ফাইভ স্যাটেলাইটের প্রাথমিক তথ্য মতে, গত ২২ জুলাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন। এদিন ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর অস্বাভাবিক এই তাপমাত্রা কমার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতিতে যত দিন যাবে তাপমাত্রা তত বাড়বে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লেয়ার নুলিস বলেন, 'গত ১৩ মাসে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি মাসেই রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রার পারদ। জুলাই মাসেও এই ধারা অব্যাহত ছিল।'

এদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে তাপমাত্রার উর্ধ্বগতিতে বাড়ছে দাবানলের ঝুঁকি। ইতোমধ্যেই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, গ্রিস, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চল ও আশপাশের লোকালয় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও, রক্ষা পাচ্ছে না পরিবেশ। প্রতিনিয়ত পুড়ছে লাখ লাখ একর বনভূমির গাছপালা ও কৃষিজমি।

২০২৩ সালে কানাডায় রেকর্ড পরিমাণ দাবানলের আগুনে প্রায় দুই বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন নির্গমনের চার ভাগের এক ভাগ। ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল দাবানলে পুড়েছে। যা মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার আয়তনের সমান। অন্যান্য বছরের তুলনায় গত বছর দাবানলের তীব্রতা বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ।

এসব দাবানলে বায়ুমণ্ডলে বেড়েছে গ্রিন হাউজ গ্যাসের মাত্রা। ফলে, একদিকে উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী, অন্যদিকে ক্রমশ কমছে বনাঞ্চল। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে গলছে হিমবাহ, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সেইসঙ্গে উর্বরতা হারাচ্ছে চাষযোগ্য জমি। এতে বিশ্বব্যাপী সংকটের মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা।

বিশ্বের অনেক অঞ্চলে দাবানল প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। তবে, সেগুলোর তীব্রতা নির্ভর করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ওপর। ২০২৩ সালে কেবল দাবানল থেকেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন টন। এতে, প্রতিনিয়ত নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার শিকার হচ্ছেন বিশ্ববাসী।

tech