আরবি বছরের শেষ মাসে মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ মিলনমেলাও সমাপ্তির অপেক্ষায়। এ সময়েই ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম স্থান, মসজিদ-আল-হারামে কাবা শরীফের গিলাফ নতুন করে তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন সৌদি আরবের সেরা বুননশিল্পীরা।
কিসওয়া হিসেবে পরিচিত কাপড়টি তৈরি করা হয় রেশম আর সুতির মিশেলে। প্রতি বছর হজ শেষে কাবা ঘরের কিসওয়া পরিবর্তনের রীতি চলে আসছে হাজার বছর ধরে। হজ শেষে কাবার পুরোনো গিলাফ কয়েক টুকরো করে কেটে উত্তরাধিকার সূত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে দান করা হয়। নতুন আরবি বছরের প্রথম দিনে পুরোনো গিলাফ পাল্টে কাবাকে ঢেকে দেয়া হবে নতুন গিলাফে। আল্লাহর ঘর খ্যাত কাবার গিলাফ তৈরির কাজে যুক্ত হতে পেরে বাঁধভাঙা খুশি বুননশিল্পীদের।
তারা বলেন, আমরা এই কারখানায় ১২ বছর ধরে কাজ করছি। সব প্রশংসা আল্লাহর, এসবই তার কারণে। কাবা আমাদের হাতের কাছে রাখার যে সম্মান আর রহমত তিনি আমাদের দিয়েছেন, তা সত্যিই বিশাল সৌভাগ্যের। ভীষণ গর্বের সঙ্গে এই কিসওয়া তৈরি করি আমরা।
পাঁচটি আলাদা কাপড়ে নকশা তোলা শেষে সেগুলো জোড়া দিয়ে তামার আংটা দিয়ে আটকে দেয়া হয়। কিসওয়া তৈরিতে ৬৭০ কেজি ওজনের রেশম কালোতে রাঙিয়ে, কাপড় শুকিয়ে এতে ফুটিয়ে তোলা হয় পবিত্র কোরআনের আয়াত। এই বুননের জন্য ব্যবহার করা হয় ২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ আর ১০০ কেজি রূপার সুতো। ৮৫০ কেজি ওজনের একটি নতুন কিসওয়া তৈরিতে সৌদি মুদ্রায় খরচ আড়াই কোটি রিয়াল বা ৬৬ লাখ ডলারের বেশি। এই খরচে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কাপড় কিসওয়া।
বর্গাকৃতির কাবা হজের মূল আকর্ষণ। প্রতি বছর হজের সময় কাবা তাওয়াফ করেন প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। সারা বছরে এ সংখ্যা কতো, তা হিসাবের বাইরে। কাবায় হাজরে আসওয়াদ হিসেবে পরিচিত কালো পাথরটির প্রতি ধর্মীয় অনুভূতির ইতিহাস ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠারও অনেক আগে থেকে। মুসলিমদের বিশ্বাস, আদম প্রার্থনার জন্য প্রথম যে ঘরটি তুলেছিলেন, সেখানেই পরে কাবা নির্মাণ করেন নবী ইব্রাহিম । তখন থেকে কয়েক হাজার বছরে এই কাবা পুনঃনির্মিত হয়েছে অসংখ্যবার।