বিদেশে এখন
0

দেশে দেশে কোরবানির মাংসের বিশেষ মেন্যু

ঈদুল আজহা আমাদের দেশে যা 'কোরবানির ঈদ', প্রতিবেশি ভারত বা পাকিস্তানে তা পরিচিত 'বকরি ঈদ' হিসেবে। মুসলিমদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসবের একটি এ ঈদ; আরব দেশগুলোতে যা 'ঈদ আল লাহম' বা 'মাংসের ঈদ' বলে পরিচিত। নামেই যেখানে মাংসের জয়জয়কার, উৎসবের রসনাবিলাসেও যে মাংসের বৈচিত্র্যময় পদের সমাহার থাকবে- তা বলাই বাহুল্য।

ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানির পর সেই মাংস বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে যে সর্বজনীনতা আছে তা এক কথায় অতুলনীয়। কোরবানির মাংস দিয়ে তৈরি নানা পদের ঈদের বিশেষ মেন্যু সাজান মুসলিমরা। দেশ আর সংস্কৃতির ভিন্নতায় খাবারের স্বাদ আর পরিবেশনায় যোগ হয় আলাদা মাত্রা।

কাচ্চি-পাক্কি বিরিয়ানির দেশ পাকিস্তানে কোরবানিতে উট ও দুম্বা প্রাধান্য পেলেও খাসি ছাড়া জমে না ঈদের খানা-পিনা। বিরিয়ানির মসলা আর গাঢ় টক দিয়ে বানানো মাসালা চপ দিয়ে শুরু হয় ঈদের স্টার্টার। ঈদের স্পেশাল মেন্যুতে থাকে খাসির কিমা দিয়ে বানানো গালাওয়াত কা কিমা, বিহারী কিমা আর ইয়েমেনি কেবদা। এছাড়া গরুর বিরিয়ানি আর নেহারি বানান কেউ কেউ।

ভারতে কোরবানির ঈদে বিশেষ পদের তালিকায় আছে বিহারী বটি কাবাব, ডেগি আলু গোস্ত, মিট করহাই, বিফ হালিমসহ নানা ঘরানার বিরিয়ানি। কোরবানির পশু হিসেবে ভেড়া বা খাসি দেশটিতে বেশি প্রচলিত।

কোরবানির পশুর মাংসকে 'বরকত' হিসেবে বিবেচনা করেন সৌদি আরবের মুসলমানরা। যেহেতু হজের শেষ দিনে এই কোরবানি করা হয়, তাই সৌদি আরবে ঈদ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজের উদ্দেশ্যে আসা মুসল্লিরাও এখানে পশু কোরবানি করেন। এখানে কোরবানির জন্য উট বা দুম্বাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। বিরিয়ানির মতো দেখতে হলেও কিছুটা আলাদা পদ্ধতিতে রান্না করা কাবসা আর রোস্ট ল্যাম্ব সৌদি আববের ঐতিহ্যবাহী ঈদের খাবার।

ঈদের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে খুব ঘটা করে কোরবানি দেয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তাই ঈদ স্পেশাল খাবারের তালিকাটাও বেশ লম্বা। বাড়িতে বানানো গরুর চাপলি কাবাব, মাটন কড়াই, মাটন মান্ডি, চিকেন ডেগি কোরমা স্বাদের তুলনা পাওয়া মিলবে বিশ্বের কোথাও কোথাও।

টক দই, চাল আর মাংস দিয়ে বানানো জর্ডানের মানসাফ, মোমো বা ডাম্পলিংয়ের মতো দেখতে তুর্কিয়ের মানতি, মরক্কোর ঝাল-মিষ্টি বিরিয়ানি জাতীয় পাসত্তিলা- এই বিশেষ পদগুলোর সাথে মিশে আছে কোরবানি ঈদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। আর শেষপাতে মিষ্টিমুখের জন্য বাকলাভা কিংবা মিশরের রাইস পুডিংয়ের জুড়ি মেলা ভার।

খাবারের স্বাদে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য ইরানে ঈদুল আজহাকে 'নোনতা ঈদ' বলেও অভিহিত করা হয়। কোরবানির পশুর মাংস দিয়ে নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন থাকে এই দিনটিতে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের কাবাব, হালিম আর বাঘালির মতো স্থানীয় খাবারের প্রাচুর্য থাকে এ সময়।

চীনের মুসলমানদের কাছে ঈদুল আজহা 'ঈদ আল গোরবান' বা 'ঈদ আল কোরবান' নামে পরিচিত। ভেড়া, উট বা গরু কোরবানি করেন চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমানরা। সাধারণত কোরবানির গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ নিজেদের জন্য রেখে বাকি দুই ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে দেন তারা। কম মসলা ব্যবহার করে চাপ, কাবাব, বিরিয়ানি ছাড়াও দেশিয় পদ্ধতিতে বানানো মিষ্টি জাতীয় খাবার থাকে ঈদের স্পেশাল মেন্যুতে।