বিদেশে এখন
0

পশ্চিমারাই রাশিয়ার ব্যবসা বাড়াচ্ছে!

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে একের পর এক আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমারা। শুরুর দিকে দেশের অর্থনীতি কিছুটা হোঁচট খেলেও এখন হাঁটছে উল্টো পথে। প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন আর তেলবাণিজ্যে আশার আলো দেখছে রাশিয়া। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা দিলেও রাশিয়ার এই সফলতার নেপথ্যে কাজ করেছে পশ্চিমারাই। তারা বলছেন, রাশিয়ার অন্যতম দুর্বলতা দেশটির জ্বালানি খাত।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন থেকে ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করেছেন, তখন থেকেই পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশের দৌঁড়ে এখন এগিয়ে রাশিয়া। ব্যক্তি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সংগঠন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ভুক্তভোগী দেশের গ্রাহকরা। ম্যাকডোনাল্ডস, অ্যাপলের মতো বড় বড় ব্র্যান্ড এই দেশে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

কিন্তু দুই বছরে রাশিয়া চমক দেখাতে শুরু করেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে মস্কো। হার মানছে না পশ্চিমারাও। সামনের জি সেভেনের বৈঠকে রাশিয়ার যুদ্ধে কাজে লাগে এমন পণ্য আমদানির ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্দেশ্য, যারা এখনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে জোর দেয়নি, তাদের দলে আনা।

কিন্তু এতো নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রুশ অর্থনীতিতে ক্ষীণ। রুশ কাস্টমসের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আমদানিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটি। যদিও আমদানি করতে হচ্ছে চড়ামূল্যে, কিন্তু টিকে যাচ্ছে বিমান আর গাড়ির মতো ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পখাত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক ধরনের 'স্যাঙ্কশন হোল' দিয়ে সেমিকন্ডাক্টর, আইফোন, আর বিমানের যন্ত্রাংশ চীন, তুর্কিয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান ও অন্য সাবেক সোভিয়েত দেশ থেকে ঘুরে ফিরে রাশিয়ার কাছে আসছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিরগিজস্তানে জার্মানির গাড়ি রফতানি ৫ হাজার ১০০ শতাংশ বেড়েছে। কোন সন্দেহ নেই এই পণ্য রাশিয়াতে যাচ্ছে, গেলো দুই বছর ধরে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জিলিনক্স, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস, ইন্টেলের প্রসেসর যুদ্ধক্ষেত্রে দিব্যি ব্যবহার করছে রাশিয়া। এই প্রযুক্তি পণ্য চীন বা হংকং কিনে তা আবার রাশিয়াতে বিক্রি করছে। ইউরোপের সব দেশের রপ্তানির তথ্য দিচ্ছে কাছাকাছি পরিসংখ্যান।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউট বলছে, ইউক্রেনে রুশ যেসব যুদ্ধাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, এরমধ্যে সাড়ে ৪শ'র বেশি বিদেশি যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্র এরমধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করা কোম্পানি আর ব্যাংকগুলোর ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার ব্যবসা বন্ধ হয়নি, বরং অন্যদিকে স্থানান্তর হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য, কম্পিউটার চিপ অন্য দেশ হয়ে যাচ্ছে রাশিয়াতে।

এদিকে, জ্বালানি খাতেও রফতানি স্বাভাবিক না থাকলে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক অবস্থা ধরে রাখতে পারতো না রাশিয়া। ডিসেম্বরে জি সেভেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানি রফতানির দর ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার বেঁধে দেয়। রাশিয়া পশ্চিমাদের ওপর জ্বালানি তেল রফতানি খাতে অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিলো। জ্বালানি তেল রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রাশিয়া বেছে নেয় অবৈধ পথ। ট্রেড উইন্ডসের তথ্য বলছে, গ্রিসের জাহাজ মালিকরা সেসময় রাশিয়ার কাছে পুরনো ১২৫ টি জাহাজ কার্গো বিক্রি করেছে। যেগুলোর দাম পড়েছিলো ৪শ' কোটি ডলার। এই ঘটনা গ্রেট গ্রিক ট্যাঙ্কার সেল নামে পরিচিত। অন্ধকার এই বহরের মধ্য দিয়ে নিজেদের তেল বাণিজ্য সচল রেখেছে মস্কো।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন বলছে, মস্কোকে দুর্বল করার একমাত্র উপায় জ্বালানি খাতকে বিপর্যস্ত করা। এখন যদি জ্বালানি তেলের দর ব্যারেল প্রতি ২০ ডলার নির্ধারণ করে দেয় পশ্চিমারা, পাশাপাশি অজ্ঞাত ক্রেতাদের কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে ইউরোপ, তবেই রাশিয়াকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলা সম্ভব।

এসএসএস