লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার জবাবে, ইয়েমেনের ১৩টি অঞ্চলে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্রভাণ্ডারসহ ৩৬টি স্থাপনা লক্ষ্য করে শনিবার তৃতীয়বারের মতো সমন্বিত এ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হামলায় সরাসরি সমর্থন জানায়, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ড।
মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার ঘটনায় একদিন আগেই ইরাক ও সিরিয়ার ৮৫টি লক্ষ্যে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০ জনে। ইরাকে নিহত ১৬ জনের মধ্যে বেসামরিক মানুষও আছে উল্লেখ করে বাগদাদের হুঁশিয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধপরায়ন এসব হামলা পুরো অঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে তুলবে। তবে অভিযানে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা মিত্ররা।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোসল সিকোরস্কি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান হামলা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইরানের কলকাঠিতে চলা গোষ্ঠীগুলো অনেক মাস ও বছর ধরে আগুন নিয়ে খেলেছে। এখন তারা নিজেরাই আগুনে পুড়ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এতোটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে, যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। লেবাননের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত, সিরিয়া, ইরাক, লোহিত সাগর- কোথায় হামলা চলছে না?
অন্যদিকে হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইরান।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি বলেন, প্রতিরোধকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপে নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। প্রত্যাখ্যান করছি এসব হামলা। মার্কিনীদের কাছ থেকে বিবেচনাপ্রসূত আচরণের প্রত্যাশা আমাদের নেই। তারা বুঝেশুনে কাজ করলে আগেই ইহুদিবাদীদের সমর্থন দেয়া বন্ধ করতো।
হামলার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের মাপা পদক্ষেপ হলেও পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশ্লেষকরা।
মিডল ইস্ট সিকিউরিটি প্রোগ্রাম পরিচালক জোনাথন লর্ড বলেন, যা ঘটছে, তা যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির এক ধরনের অবনতি, তা আমরা বলতেই পারি। কিন্তু আমি মনে করি যে বেশ বুঝেশুনে, মেপেই এ অবনতি ঘটানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ হামলা এখনও শুরু না হলেও আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না। মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার প্রতিশোধ অতীতেও যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে। তবে এবার হামলার পরিসর অনেক বেড়েছে।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধের চার মাস চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানকে বার্তা দিতে হামলা হলেও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা এড়াতে ইরানের ভেতরে হামলা চালানো থেকে বিরতই থাকছে যুক্তরাষ্ট্র।