চরম আবহাওয়ায় ভারতে কৃষি পণ্য উৎপাদনে ভাটা চলছে গেলো দুই বছর ধরে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পণ্য সংকটে বেড়েছে দাম। অবস্থার জেরে দুই বছর ধরে গম রপ্তানি বন্ধ রেখেছে খাদ্যপণ্যটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী এই দেশটি। ২০২২ সালের দাবদাহে গম উৎপাদন কমে যাওয়ায় নেয়া হয় এ পদক্ষেপ, যা চলছে এখনও।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গেলো বছর চাল আর পেঁয়াজ রপ্তানিও নিষিদ্ধ করে নয়া দিল্লি, যা ক্ষোভ বাড়িয়েছে কৃষক ও রপ্তানিকারকদের। আসছে বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে বলে আভাস ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের। এতে কৃষিপণ্যের ফলন বাড়বে এবং কৃষকরা লাভবান হবে বলে বাড়ছে প্রত্যাশা।
তবুও রাষ্ট্র পরিচালিত শস্যভাণ্ডারগুলোতে মজুত বাড়াতে তোড়জোড় চালাচ্ছে ভারত সরকার। হিন্দুস্তান টাইমসে বলা হয়, চলতি মাসে ভারতে সরকারি শস্যের মজুত নেমে আসে ১৬ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
এ বছর মজুতের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টন গম সংগ্রহ করেছে ভারত সরকার। যা খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নির্ধারিত এক কোটি ৮৬ লাখ টনের চেয়ে বেশি। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে অন্যতম প্রধান এ খাদ্যশস্যের দাম নাগালে রাখা নিশ্চিত করতে আরও প্রায় ৮০ লাখ টন গম কেনা দরকার নয়া দিল্লির। বাজার স্থিতিশীল করতে গেলো এক বছরে সরকারি শস্যভাণ্ডার থেকে রেকর্ড এক কোটি টন গম খোলা বাজারে ছেড়েছিল ভারত।
অন্যদিকে সরকারি সংগ্রহে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টন চাল আছে নয়া দিল্লির, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৩৫ লাখ টনের চার গুণ বেশি। কিন্তু তাও ভারতে চালের বার্ষিক দাম বৃদ্ধির হার বর্তমানে ১৩ শতাংশ। বিশ্ববাজারে মোট চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশই এ খাতে শীর্ষ ভারতের দখলে। ২০২১-২২ সালে প্রায় সোয়া দুই কোটি টন চাল রপ্তানি করেছিল ভারত, যা দেশটির মোট উৎপাদনের ছয় ভাগের এক ভাগ।
গেলো ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিও নিষিদ্ধ করে নয়া দিল্লি। উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেও স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় আসে রপ্তানি বন্ধের পদক্ষেপ। ২০২৩-২৪ সালে রবি বা শীতকালীন শস্য হিসেবে প্রায় দুই কোটি টন পেঁয়াজ রোপণের কথা রয়েছে ভারতে, যা এক বছর আগের প্রায় আড়াই কোটি টন ফলনের তুলনায় ১৮ শতাংশ কম।
সবশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতের খুচরা বাজারে মূল্যস্ফীতি মার্চে এক বছরের ব্যবধানে নেমে এসেছিল পাঁচ শতাংশের নিচে। যা ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে এপ্রিলে আবারও এ হার পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এখনও আট শতাংশের বেশি। এ কারণেই নতুন করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি এড়াতে আপাতত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে ভাবছে না নয়া দিল্লি।