নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি করবে রাশিয়া

মহাকাশ স্টেশন
মহাকাশ স্টেশন | ছবি: সংগৃহীত
0

মহাকাশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল মহাকাশ স্টেশন, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন-আইএসএস। ভিন্ন ভিন্ন দেশের পাঁচটি স্পেস এজেন্সির উদ্যোগে নির্মিত এই স্পেস স্টেশন আগামী ২০৩০ সালে কন্ট্রোলড ডি অরবিটালের মাধ্যমে অবসরে যাবে। এতে অনেক স্পেস এজেন্সিই মহাকাশ গবেষণার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এই আশঙ্কা কাটিয়ে উঠতে রাশিয়ান স্পেস এজেন্সি রসমসকস মহাকাশে নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করছে, যার নাম হতে যাচ্ছে রাশিয়ান অরবিটাল স্টেশন-আরওএস।

এই স্পেস স্টেশনটি মডিউলার এক্সপ্যানশন মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে থাকছে পার্শিয়াল অটোমেশন। কেননা মহাকাশ গবেষণায় অপারেশনাল ফ্লেক্সিবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি নভোচারীদের নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস করবে এই নতুন নকশা। স্পেস স্টেশনটির মূল লক্ষ্য মাইক্রোগ্র্যাভিটি নিয়ে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনা, নতুন লাইফ সাপোর্ট টেকনোলজির উদ্ভাবন, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের পাশাপাশি টেলিযোগাযোগের উন্নয়ন ও চাঁদে মনুষ্যবাহী মিশন সিস্টেম পরীক্ষা করা।

তিসনিআইম্যাশ নামের রাশিয়ান এক মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নতুন এই স্পেস স্টেশন ডিজাইন করছে। তাদের বরাতে জানা গেছে, স্পেস স্টেশনটি ৯৬ থেকে ৯৮ ডিগ্রি কোণে হাই ল্যাটিচিউড অরবিটে অবস্থিত হবে এবং এটি প্রতিটি কক্ষপথের সঙ্গে আর্কটিকসহ সমগ্র রাশিয়ায় নিয়মিত কভারেজ প্রদান করবে। এর অরবিটাল মোড আইএসএস থেকে মৌলিকভাবে আলাদা হবে। পৃথিবীর রিমোট সেন্সিং, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের মতো বিষয়ে ফোকাস করবে।

স্টেশনটিকে সার্ভিস দেয়ার জন্য, আধুনিকীকরণ করা মানববাহী মহাকাশযান ‘ওরেল’ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা একইসঙ্গে ছয়জন নভোচারীকে কক্ষপথে পৌঁছে দেবার পাশাপাশি পৃথিবীতে ৫০০ কেজি পর্যন্ত কার্গো ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। এই স্টেশন থেকে আরএসসি এনার্জিয়ার তৈরি ‘আরগোনাভট’ প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে তৈরি করা নতুন প্রজন্মের মনুষ্যবিহীন স্পেসক্র্যাফট দ্বারা কার্গো মিশন পরিচালিত হবে।

আরও পড়ুন:

আরওএস নামের এই স্পেস স্টেশনে থাকছে বেসিক এনার্জি মডিউল, সায়েন্স মডিউল ও ছয়টি ডকিং নোডসহ প্রিচাল-টু টাইপ নোড মডিউল। তিন-স্তরের গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ফটোসেল ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ‘জিউস’ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গভীর মহাকাশের জন্য একটি পারমাণবিক বৈদ্যুতিক রকেট ইঞ্জিন প্রকল্প - ভবিষ্যতে এই স্টেশনেই পরীক্ষা করা হতে পারে।

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোট দুইটি ধাপে রাশিয়ান অরবিটাল স্টেশন-আরওএস মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। প্রথম ধাপে ২০২৭ এর শেষদিকে রসের প্রথম মডিউল উৎক্ষেপণ করা হবে। প্রথম ধাপটি ২০২৭ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে। এই সময়ের মধ্যে স্পেস স্টেশনটির মূল অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ২০২৮ সালেই এই স্পেস স্টেশনের জন্য মনুষ্যবাহী মিশন শুরু করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে এতে আরও দুটি মডিউল যুক্ত করে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও বর্তমান পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের দিকে আইএসএস ডিঅরবিট হবার পর আইএসএস থেকে বিদ্যমান রাশিয়ান সেগমেন্ট মডিউলগুলিকে নতুন আরওএস স্টেশনে অন্তর্ভুক্ত করা।

সম্পূর্ণ দেশিয় উন্নয়নের উপর নির্ভর করে তৈরি করা আগামীর জন্য মহাকাশে রাশিয়ার একটি টেকসই ও স্বাধীন উপস্থিতির ভিত্তি স্থাপন করতে যাচ্ছে আরওএস নামক স্পেস স্টেশনের মাধ্যমে।

সেজু