স্মার্টফোনে কত ধরনের ডিসপ্লে (,Display,) হয়
এলসিডি বা লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (LCD- Liquid Crystal Display) এখনো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রযুক্তি। কম দামে পাওয়া যায়, দীর্ঘদিন চলেও, তাই বাজেট ব্যবহারকারীদের কাছে এটি জনপ্রিয়।
অন্যদিকে ওএলইডি (OLED- Organic Light-Emitting Diode) ডিসপ্লেতে প্রতিটি পিক্সেল নিজে আলো তৈরি করে বলে ছবির উজ্জ্বলতা ও স্পষ্টতা বেশি হয়। পাতলা এবং নমনীয় হওয়ায় ফোল্ডেবল ফোনেও এই ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়, তবে দাম তুলনামূলক বেশি।
অ্যামোলেড (এএমওএলইডি) বা অ্যাকটিভ ম্যাট্রিক্স ওএলইডি হলো ওএলইডির (AMOLED-Active Matrix Organic Light Emitting Diode) আরও উন্নত রূপ, যা দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং গভীর রঙ প্রদর্শনের কারণে স্মার্টফোনের জন্য আদর্শ বলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন:
এর আরও উন্নত সংস্করণ সুপার এএমওএলইডি (Super AMOLED)। যেখানে রঙ আলাদা করে আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্স আরও মসৃণ। সাধারণত উচ্চমূল্যের ফোনেই এই ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে আইপিএস বা ইন প্লেইন স্যুইচিং ডিসপ্লে (IPS- In-Plane Switching Display) রঙের নির্ভুলতা ও স্থিতিশীলতার জন্য পরিচিত। এএমওএলইডির তুলনায় সস্তা হওয়ায় বাজেট ও মাঝারি দামের ফোনগুলোতে আইপিএস প্রযুক্তিই বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী ব্যবহারকারীরা এই প্রযুক্তিগুলোর যেকোনোটি বেছে নেন।
পিওলেড (pOLED- plastic organic light-emitting diode) মূলত ওএলইডি ডিসপ্লেরই একটি উন্নত সংস্করণ, যেখানে গ্লাস সাবস্ট্রেটের বদলে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিক সাবস্ট্রেট। এ কারণে এই ডিসপ্লে হয় বেশি নমনীয়, হালকা ও টেকসই। ফোল্ডেবল বা কার্ভড ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ফোনে পিওলেড ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
ডিসপ্লে সুরক্ষায় পলি নাকি টেম্পার্ড গ্লাস—কোনটি ভালো?
স্মার্টফোনের ডিসপ্লে সুরক্ষায় টেম্পার্ড গ্লাসকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত ৫ থেকে ৭ স্তরের সুরক্ষায় তৈরি এই গ্লাস পড়ে যাওয়া বা ধাক্কা লাগার সময় ডিসপ্লে ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি স্ক্র্যাচ, আঘাত ও ধুলো থেকেও ফোনকে কার্যকরভাবে রক্ষা করে।
অন্যদিকে পলি স্ক্রিন প্রটেক্টর হালকা ও সস্তা হওয়ায় বাজেট ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়। তবে এটি মূলত স্ক্র্যাচ প্রতিরোধেই কার্যকর—জোরে আঘাত লাগলে বা ফোন পড়ে গেলে সুরক্ষার ক্ষেত্রে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারে না। যেসব ব্যবহারকারী ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করেন, তারা অনেক সময় পলি বেছে নেন, কারণ কিছু টেম্পার্ড গ্লাস সেন্সরের সঙ্গে ঠিকমতো সামঞ্জস্য রাখে না।
এ ছাড়া বাজারে এখন হাইব্রিড গ্লাস নামের একটি সমন্বিত প্রটেক্টরও পাওয়া যায়, যা পলি ও গ্লাস মিলিয়ে তৈরি এবং তুলনামূলকভাবে ভালো সুরক্ষা দেয়। দামি ফোন বা অধিক সুরক্ষা প্রয়োজন হলে টেম্পার্ড গ্লাসই সবচেয়ে উপযোগী। হালকা ব্যবহারে সস্তা সমাধান চাইলে পলি প্রটেক্টর যথেষ্ট, আর ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্টে সমস্যা এড়াতে হাইব্রিড বা উন্নতমানের পলি ভালো বিকল্প হতে পারে।
অ্যামোলেড (AMOLED) ডিসপ্লের স্মার্টফোন যে কারণে সেরা
অ্যামোলেড আসলে ওএলইডি প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ, যেখানে অতিরিক্ত টিএফটি (থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টর) স্তর যুক্ত থাকে। এই স্তর আলো নিয়ন্ত্রণকে আরও নির্ভুল করে, ফলে পিক্সেলগুলো স্বাধীনভাবে জ্বলে বা নিভে কাজ করতে পারে। যেহেতু অ্যামোলেড ডিসপ্লে রঙ তৈরি করতে পোলারাইজিং ফিল্টার, ক্রিস্টাল বা এলইডি ব্যাকলাইটের ওপর নির্ভর করে না, তাই স্ক্রিন হয় পাতলা, নমনীয় এবং কম শক্তি ব্যবহারকারী।
আইপিএস প্যানেলের তুলনায় অ্যামোলেডে রঙ আরও উজ্জ্বল ও জীবন্ত দেখা যায়। ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলও বেশি, অর্থাৎ যেকোনো দিক থেকে দেখলেও ছবির মান নষ্ট হয় না। রেসপন্স টাইম দ্রুত হওয়ায় গেম খেলার সময় স্ক্রিন ল্যাগ করে না এবং উচ্চ রিফ্রেশ রেট মসৃণ ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা দেয়।
ব্যাটারি সাশ্রয়ে অ্যামোলেড বেশ কার্যকর। কালো অংশের পিক্সেল নিভিয়ে রাখা যায় বলে কম আলোতে বা ডার্ক মোডে বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী শুধু নির্দিষ্ট পিক্সেল জ্বলে—অন্যগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। এই কারণেই অনেক প্রিমিয়াম ফোনে অ্যামোলেড ব্যবহৃত হয়।
রঙ ক্ষেত্রেও অ্যামোলেড এগিয়ে। উচ্চ কনট্রাস্টের কারণে ছবি ও ভিডিও আরও স্পষ্ট এবং গভীর দেখায়, যা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য বাড়তি সুবিধা।
গঠনগত দিক থেকেও অ্যামোলেড তুলনামূলক পাতলা। আইপিএস স্ক্রিনের কারণে অনেক ফোন মোটা হয়ে যায়, কিন্তু অ্যামোলেড প্যানেল অর্ধেক বা তারও কম পুরু হতে পারে। ফলে ফোনের ভেতরে কম জায়গা নেয়, ডিজাইন হয় স্লিম ও স্টাইলিশ, আর ওজনও কম থাকে।
সব মিলিয়ে অ্যামোলেড ডিসপ্লে শুধু ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতাই উন্নত করে না, বরং ফোনকে করে শক্তি-সাশ্রয়ী, স্মার্ট ও আরও আকর্ষণীয়।





