অতিরিক্ত অ্যাক্সেস পেয়ে কোনো নকল বা ক্ষতিকর অ্যাপ সহজেই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের সার্ভারে পাঠাতে পারে। এজন্যই খুব জরুরি হলো আপনি যে অ্যাপটি ইন্সটল করছেন, সেটি আসল নাকি নকল তা নিশ্চিত হওয়া।
যেকোনো অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করলে নকল অ্যাপের ঝুঁকি অনেকটাই কমে। কারণ জনপ্রিয় অ্যাপদের নাম ব্যবহার করে নানা ভুয়া অ্যাপ বানিয়ে প্রতারকরা ফাঁদ পেতে থাকে। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, চ্যাটজিপিটি, ইনস্টাগ্রামের মতো বড় ব্র্যান্ডের নকল অ্যাপ এরইমধ্যেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব অ্যাপ ব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা নানা বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই অ্যাপ ইন্সটল করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।
আরও পড়ুন :
কীভাবে বুঝবেন অ্যাপটি আসল নাকি নকল?
গুগল প্লে স্টোর
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে ম্যালওয়্যারের হুমকি থেকে রক্ষা করতে গুগল প্লে প্রোটেক্ট একটি কার্যকরী উপায়। এটি ব্যবহার করতে হলে প্রথমে প্লে স্টোর অ্যাপে প্রবেশ করে প্রোফাইল আইকনে ট্যাপ করুন। সেখানে প্লে প্রোটেক্ট অপশনটি নির্বাচন করুন। এরপর সেটিংস থেকে স্ক্যান অ্যাপ চালু করলে আপনার ডিভাইস এবং অ্যাপগুলো নিয়মিত ম্যালওয়্যারের জন্য পরীক্ষা হবে।
এছাড়া, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের শুধু গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ প্লে স্টোরে শুধু অফিসিয়াল অ্যাপ আপলোড করা থাকে। যা নকল বা বিপজ্জনক অ্যাপ ডাউনলোডের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নামায়।
কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে তার রেটিং এবং ব্যবহারকারীদের রিভিউ যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ভালো রিভিউ থাকা অ্যাপগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে ধরা হয়।
একই ধরনের বা প্রায় একই রকম ফিচারের অনেক অ্যাপ প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। এমন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা অ্যাপটি বেছে নেয়ায় যুক্তিসংগত।
তবে ডাউনলোড করার আগে অবশ্যই রেটিং এবং রিভিউ পরীক্ষা করে নেয়া উচিত, যাতে আপনি নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাপল অ্যাপ স্টোর
আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহারকারীরা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে তুলনামূলকভাবে নিরাপদে থাকতে পারেন। প্লে স্টোরের মতো, অ্যাপল অ্যাপ স্টোরেও মূল এবং বৈধ অ্যাপগুলোই থাকে। আর কোনো নকল অ্যাপ ধরা পড়লেই তা সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করা হয়।
অ্যাপল তাদের স্টোর খুবই দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে। তাই ব্যবহারকারীরা সাধারণত অ্যাপের বিষয়ে বেশি নিশ্চিন্ত থাকেন। একজন ডেভেলপার যখন অ্যাপ আপলোড করে, তখন তাকে অ্যাপলের নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। যদি কোনো অ্যাপ নকল বা গ্রাহকের তথ্য চুরির সঙ্গে জড়িত থাকে তা দ্রুত ব্যান করা হয়।
তবুও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে তার রেটিং এবং ব্যবহারকারীদের রিভিউ পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা এপিকে
অনলাইনে কোনো অ্যাপ খুঁজলে সর্বদা তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যাওয়াই নিরাপদ। সাধারণত সেখানে অ্যাপ ডাউনলোডের জন্য দুটি লিংক দেয়া থাকে। গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর। যদি এই লিংকগুলো আসল অ্যাপের হয় তাহলে ক্লিক করলে সরাসরি স্টোরে নিয়ে যায়। ফলে আপনি নিরাপদে অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন।
অ্যাপ ডেভেলপারের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে অ্যাপ স্টোরের বিবরণ থেকে অ্যাপের বৈশিষ্ট্য এবং ডেভেলপার সম্পর্কে তথ্য জানা উচিত।
ইন্টারনেটে অ্যাপের বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায় যা আকর্ষণ সৃষ্টি করে এবং আমরা অনেক সময় সেই অ্যাপগুলো ডাউনলোড করি। যদি বিজ্ঞাপন থেকে সরাসরি প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে নিয়ে যায়, তবে অ্যাপটি সাধারণত নিরাপদ।
তবে কখনো কখনো বিজ্ঞাপন আপনাকে ডেভেলপারদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়। সেখানে দেয়া স্টোরের লিংক ব্যবহার করলেই নিরাপদ ডাউনলোড নিশ্চিত হয়। অন্যথায়, সেসব অ্যাপ ডাউনলোড করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ইউআরএল এইচটিটিপিএস
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সময় অবশ্যই ইউআরএল (URL) যাচাই করা জরুরি। যদি ইউআরএল এইচটিটিপিএস (https) দিয়ে শুরু হয়, তাহলে সাইটটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত। তবে যদি শুধু এইচটিটিপি (http) দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে সাইটে নিরাপত্তার ত্রুটি রয়েছে। মূল বা অফিসিয়াল অ্যাপগুলো সাধারণত https ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়, আর এইচটিটিপি (http) ওয়েবসাইটে নকল অ্যাপের ঝুঁকি থাকে। তাই সবসময় এইচটিটিপিএস (https) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাপ ডাউনলোড করাই নিরাপদ।
অ্যাপ ইন্সটল করার সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অ্যাপটি কোন কোন তথ্য বা ফিচারে অ্যাক্সেস চাইছে তা খেয়াল করা। যদি মনে হয় অ্যাপটির কাজের সঙ্গে যেসব পারমিশন চাওয়া হচ্ছে তা সংগতিপূর্ণ নয় তাহলে সেই অ্যাকসেস দিতে এড়িয়ে চলাই নিরাপদ।
আপনি চাইলে এরইমধ্যেই আপনার ফোনে ইন্সটল করা অ্যাপগুলো কোন কোন তথ্যের অ্যাক্সেস নিয়েছে তা ফোনের সেটিংস থেকে দেখতে পারবেন।
এছাড়া, ডাউনলোড করার আগে অ্যাপের বিবরণ ভালোভাবে পড়া জরুরি। যদি কোনো অ্যাপে প্রচুর বানান বা ব্যাকরণগত ভুল থাকে তাহলে এটিকে ভুয়া অ্যাপের সম্ভাব্য ইঙ্গিত হিসেবে নেয়া যায়।
কারণ কোনো বিশ্বস্ত ডেভেলপার এই ধরনের ভুল করবে না। তাই অ্যাপের মৌলিক বিবরণে এমন ভুল থাকলে সেটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।




