দুই হাজারের বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চলছে সাতদিনব্যাপী পিএইচএ গ্লোবাল সামিট। একটি আয়োজনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব শাখার দেশি, প্রবাসী ও বিদেশি চিকিৎসকদের এমন মিলনমেলা আগে দেখেনি বাংলাদেশ।
প্রশ্ন এখন, দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক এই সামিটে কি লাভ বাংলাদেশের? স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ''আমি বিশ্বাস করি যে, টেকনোলজি ট্র্যান্সফার করে আমরা যদি আদান প্রদান করি তাহলে আমাদের ডাক্তারদের স্কিল, নলেজ অনেক বাড়বে।'
বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া ১০ হাজারের বেশি চিকিৎসক ছড়িয়ে আছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। কোভিডের সময় প্রবাসী চিকিৎসকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে থাকা চিকিৎসকদের নানাভাবে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিলো প্ল্যানেটারিয়া হেলথ একাডেমিয়ার। সাড়ে তিন বছর অনলাইনে সভা, সেমিনার, নানান প্রশিক্ষণের পর এবার বৈজ্ঞানিক মিলনমেলা হলো সরেজমিনে ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে।
বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. আব্দুস শাকুর খান বলেন, 'এখানে অত্যন্ত আধুনিক চলমান যে সাবজেক্টগুলো আছে সেইগুলোর উপর পেপার পড়া হচ্ছে, ওয়ার্কশপ হচ্ছে, ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে।'
ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াকের সার্জন ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, 'সব কিছু গোছানো। তারা যেভাবে এই কার্ডিয়া ও অন্যান্য সাবজেক্টের সবাইকে একসাথে করার আপ্রান চেষ্টা করেছে এইটা খুবই অভূতপূর্ব।'
মেডিসিন, সার্জারি, গাইনিকোলজি, নেফ্রলজি, ক্যান্সারসহ ৩০টি বৈজ্ঞানিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি সেশনেই বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ও গবেষকরা। সঙ্গে রয়েছেন রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান লন্ডন, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের মতো আন্তর্জাতিক শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রেসিডেন্টরাও।
বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'একেকটা স্পেশালিস্ট আলাদাভাবে হচ্ছে এবং আরও সংযুক্ত হচ্ছে। যেটা লাভ হচ্ছে সেটা হচ্ছে প্রত্যেকটা সাবজেক্টে সবাই কানেক্ট হতে চাচ্ছে। আমি মনে করি যে এইটা বড় পদক্ষেপ।'
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক জ্ঞান অর্জন, সম্প্রসারণ ও শেয়ারিং এ সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশি চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমানের সেবা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা হচ্ছে গ্লোবাল সামিটে।
স্বাস্থ্য অধিদফতের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, 'এখান থেকে যারা ফিজিসিয়ান থাকবে তাদেরকে বাহিরে নিয়ে একটা ট্রেনিং দেওয়া, আধুনিক যেসব যন্ত্র আছে সেগুলো সম্পর্কে শেখানো, স্কিলগুলো ডেভেলপ করানো। এই প্রকল্পের আওতায় প্রথমে একজনকে নিয়েছে। এবছরও বেশকয়েকজনকে নিবে।'
এই সামিট প্রথমবার বাংলাদেশের সকল সোসাইটিকেও এক ছাতার নিচে এনেছে বলে মত অংশগ্রহনকারীদের। এই উদ্যোগ রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম বলেন, 'আমি আরেকটা সোসাইটির লোকদের চিনছি, তারা আমাদেরকে চিনছে, এই যে মেলবন্ধন এইটা একদেশে থেকেও কিন্তু আমাদের এতদিনে হয়নি।'
ল্যাব এইড ক্যান্সার হাসপাতালের অনকোপ্লাস্টিকের ব্রেস্ট সার্জন ডা. আলী নাফিসা বলেন, 'আমাদের টিচিং অনেক ভালো হবে, লার্নিং ভালো হবে। আল্টিমেটলি আমাদের রোগীদের চিকিৎসা সেবা ভালো হবে।'
ইতিমধ্যেই মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার সর্বোচ্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া।
প্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়ার ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. তাসবীরুল ইসলাম বলেন, 'বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস), ডিজি এডুকেশন, ডিজি হেলথ এদের সাথে কাজ করছি। অলরেডি আমাদের এমওইউ (MOU) সাইন হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কাজ করছি। আমরা যদি সরকারকে সম্পৃক্ত না করতে পারি তাহলে আমরা আগাতে পারবো না।'
দেশি প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি চিকিৎসকদের এই মঞ্চ দেশের মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবাকে সত্যিকার অর্থে বিশ্ব মানে পৌঁছে দেবে বলে মত আয়োজক ও অংশগ্রহনকারীদের।
আর এসব উদ্যোগে দেশিয় চিকিৎসকদের মান বাড়ানোর পাশাপাশি রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।