রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সাবমারসিবল পাম্প থাকলেও ক্যাম্পাস চত্বরের সব ক্যান্টিন ও খাবার হোটেলগুলোতে সাপ্লাইয়ের পানি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পানি রাখা ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকের বোতল ও ড্রাম।
মূলত অপরিষ্কার পাত্রের পানি, খোলা ও নোংরা পরিবেশে খাবার খেলে জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিন ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরের বিভিন্ন খাবার হোটেলে অস্বাস্থ্যকরভাবে পানি ও খাবার পরিবেশনকে কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা অনেক সময় না জেনেই পানি খেয়ে ফেলছি, যেটা আমাদের জন্য নিরাপদ না। খাবারের পানির মান খুবই বাজে এবং একবার ব্যবহারযোগ্য বোতলগুলো দেখতেও খুব পুরাতন।'
অস্বাস্থ্যকর পানি পান করে জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
ক্যাম্পাস চত্ত্বরে পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং সব দোকানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশনে কড়া নির্দেশনা দেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের।বলেন, 'জন্ডিস একটা পানিবাহিত রোগ। সেজন্য ক্যান্টিন ও হোটেলগুলোর সচেতন হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাঝে মাঝে পরিদর্শনে আসা উচিত।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জন্ডিস পরীক্ষা করেছে ৪২২ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫২ জন। তাদের ৩ জন হলের এবং ২৪ জন আশেপাশের এলাকার মেস বা বাসায় থাকেন।
জন্ডিসের প্রকোপ বাড়লেও খাবার হোটেলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ঢাকনা বিহীন অপরিষ্কার প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার ও নোংরা পরিবেশে রান্না চলছে। তবে প্রশাসনের নির্দেশনা যথাযথভাবে মানছেন বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীদের।
এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, 'আমি নিজস্ব টিউবওয়েল থেকে বিশুদ্ধ পানি আনি। আর পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে; সেভাবেই হোটেল চালাচ্ছি।'
এদিকে জন্ডিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রাবি প্রশাসন। এরইমধ্যে ফার্মেসি বিভাগে সচেতনতামূলক সভা, র্যালি ও লিফলেট বিতরণ করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কম খরচে দিনব্যাপী ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়া হয়।
জন্ডিস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক র্যালী। ছবি: এখন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, 'আমরা দুই সপ্তাহ আগে থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি বিশ্ববিদ্যারয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। খাবার দোকানগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে তারা কি পানি ব্যবহার করছে। কিন্তু তারপরেও আমি ঐসব পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছি।'
এখন পর্যন্ত যারা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের সংক্রমিত হয়েছেন। বিশ্রামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব বলে জানান চিকিৎসকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, 'জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে তারা আমাদের শরণাপন্ন হবে। আমরা তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। একটু নিয়ম মেনে চললে ভালো হয়ে যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সতর্ক হলেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।'
গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের সংক্রমণে জন্ডিসে আক্রান্ত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দিনে দিনে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা।