মাথা ঘোরা ও দুর্বলতার পেছনে লো ব্লাড প্রেশার, কখন সতর্ক হবেন

লো ব্লাডপ্রেশার শারীরিক দুর্বলতার কারণ হতে পারে
লো ব্লাডপ্রেশার শারীরিক দুর্বলতার কারণ হতে পারে | ছবি: এখন টিভি
0

অনেকেরই মাঝেমধ্যে মাথা ঘোরা কিংবা শরীর দুর্বল লাগার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসব উপসর্গের পেছনে একটি সাধারণ কারণ হতে পারে লো ব্লাড প্রেশার (Hypotension) বা হাইপোটেনশন। বিশেষ করে বসা বা শোয়া অবস্থান থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে যদি বারবার মাথা ঘোরে বা অস্বস্তি লাগে, তাহলে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়া ঠিক নয়। লো প্রেশার সাধারণত ডিহাইড্রেশন, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতার কারণে হতে পারে। এ অবস্থায় মাথা ঘোরার পাশাপাশি ঝাপসা দেখা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, ঠান্ডা ও ঘামযুক্ত ত্বক অথবা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

যদিও লো ব্লাড প্রেশার অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের মতো নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত নয়, তবু এটি অবহেলা করলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে। তাই এ ধরনের লক্ষণ ঘন ঘন দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

লো ব্লাড প্রেশারের বিভিন্ন লক্ষণ

  • মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা (বিশেষ করে দাঁড়ানোর সময়)
  • দুর্বলতা, ক্লান্তি, বা মনোযোগের অভাব
  • ঝাপসা দেখা
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • দ্রুত, অগভীর শ্বাস
  • ঠান্ডা, ফ্যাকাশে, ঘামযুক্ত ত্বক (গুরুতর ক্ষেত্রে)
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়া

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

ডিহাইড্রেশন: পর্যাপ্ত জল পান না করলে শরীরে কখনো কখনো পানি স্বল্পতার তৈরি হয়। এর ফলে মাথা ঘোরা বা চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এ সমস্যা খুব সহজেই সমাধানযোগ্য।

অন্যান্য রোগ: শরীরের বিভিন্ন  অন্তর্নিহিত রোগের কারণে শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বমি ভাব, অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট বা অগভীর শ্বাসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। হৃদরোগ বা এন্ডোক্রাইন সমস্যার কারণেও এ লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।  

গুরুতর অবস্থা: মাঝে মাঝে খুব কম রক্তচাপ (যেমন: <৯০/৬০ mmHg) বা রক্তচাপের আকস্মিক পতন হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা জীবনের জন্য হুমকির কারণও হতে পারে।

ডাক্তারের কাছে ব্লাড প্রেশার চেক-আপ |ছবি: সংগৃহীত

যদি এ লক্ষণগুলো ঘন ঘন হয় বা হঠাৎ করে দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

লো প্রেশারের লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক করণীয় (ডাক্তারের পরামর্শ সাপেক্ষে)

  • নিয়মিত পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে।
  • হঠাৎ উঠে দাঁড়ানো যাবে না, বরং ধীরে ধীরে উঠতে হবে।
  • নিয়মিত ও পরিমিত খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত বা একেবারেই কম খাবার খাওয়া যাবে না।
  • আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

লো প্রেশার সমস্যায় পরিমিত খাবার ও পানি পান জরুরি |ছবি: এখন টিভি

লো প্রেশার সব সময় ক্ষতিকর নয়, তবে লক্ষণ থাকলে অবহেলা করা ঠিক নয়।

লো প্রেশার সমস্যায় ভুগলে কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিৎ?

লো প্রেশারের রোগীর খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত লবণ, জল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা/কফি), ভিটামিন-বি১২, ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মাংস, শাক, ডাল) এবং পটাশিয়াম ও সোডিয়ামযুক্ত ফল (কলা, লেবু, কিশমিশ) অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অ্যালকোহল ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

মানুষের লো ব্লাড প্রেশারের মান ও স্বাভাবিক ব্লাড প্রেশার

লো প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বলতে সাধারণত রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার ৯০/৬০ mmHg (মিলিমিটার মার্কারি) এর নিচে থাকাকে বোঝায়, তবে এটি ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। যদি লো প্রেশারের কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে এটি স্বাভাবিকও হতে পারে। তবে লক্ষণ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg ধরা হয়, তাই এর চেয়ে কম থাকাটাকেই লো প্রেশার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এসএইচ